ইকামতে কখন দাড়াবে?

💬 : 0 comment

প্রথমে আমরা দয়াল নবীজী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার হাদিস শরীফ সমূহ এবং ছাহাবায়ে কেরাম রিদ্বওয়ানুল্লাহি আলাইহিম আজমাঈন গণের আদত মোবারক দেখবো। পরে বিস্তারিত আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ!


* হাদিস শরীফ নং এক.


حَدَّثَنَا مُسْلِمُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، قَالَ: حَدَّثَنَا هِشَامٌ، قَالَ: كَتَبَ إِلَيَّ يَحْيَى بْنُ أَبِي كَثِيرٍ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي قَتَادَةَ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلّى الله عليه وسلم: إِذَا أُقِيمَتِ الصَّلاَةُ، فَلاَ تَقُومُوا حَتَّى تَرَوْنِي. (صحيح البخاري رقم ٦٣٧ ، صحيح مسلم رقم ٦٠٤)


অনুবাদঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু আবি কাতাদাহ থেকে বর্ণিত, তিনি তার পিতা আবু কাতাদাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন। হযরত আবু কাতাদাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সালাতের ইক্বামাত হলে আমাকে না দেখা পর্যন্ত তোমরা দাঁড়াবে না।(ছহিহ আল বুখারী, হাদিস শরীফ নং ৬৩৭, ছহিহ মুসলিম, হাদিস শরীফ নং ৬০৪)


সনদঃ ছহিহ।


শিক্ষাঃ উক্ত হাদিস শরীফ খানা থেকে আমরা শিখতে পারি,


ক. নবীজী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুজরা শরীফে অবস্থান করতেন। জামাতের সময় হলেই বের হয়ে আসতেন। উল্লেখ্য, হুজুরের হুজরা শরীফ মসজিদেই ছিল।


খ. নবীজী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুজরা শরীফ হতে তাশরীফ আনার আগ পর্যন্ত সকলেই অপেক্ষা করতেন।


গ. নবীজী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুজরা শরীফ হতে তাশরীফ আনার আগেই হযরত বেলাল রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ইক্বামত দিয়ে দিতেন।


ঘ. ইক্বামত শুনেই হুজুর বের হয়ে আসতেন।


ঙ. নবীজী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুজরা শরীফ হতে বের হলেই সকলে দাঁড়িয়ে যেতেন।


চ. এখানে ‘হাইয়্যা আলাছ ছালাহ’ বা, ‘হাইয়্যা আলাল ফালাহ’ শুনে দাঁড়ানোর বর্ণনা নেই।


** হাদিস শরীফ খানার ব্যাখ্যায় ইমাম গণের বক্তব্যঃ


* প্রথম বক্তব্যঃ ইমাম কুরতুবী রাহিমাহুল্লাহ বলেন,


قَالَ الْقُرْطُبِيُّ ظَاهِرُ الْحَدِيثِ أَنَّ الصَّلَاةَ كَانَتْ تُقَامُ قَبْلَ أَنْ يَخْرُجَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ بَيْتِهِ وَهُوَ مُعَارِضٌ لِحَدِيثِ جَابِرِ بْنِ سَمُرَةَ أَنَّ بِلَالًا كَانَ لَا يُقِيمُ حَتَّى يَخْرُجَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَخْرَجَهُ مُسْلِمٌ وَيُجْمَعُ بَيْنَهُمَا بِأَنَّ بِلَالًا كَانَ يُرَاقِبُ خُرُوجَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأول مايراه يَشْرَعُ فِي الْإِقَامَةِ قَبْلَ أَنْ يَرَاهُ غَالِبُ النَّاسِ ثُمَّ إِذَا رَأَوْهُ قَامُوا فَلَا يَقُومُ فِي مَقَامِهِ حَتَّى تَعْتَدِلَ صُفُوفُهُمْ. (فتح الباري بشرح صحيح البخاري ، طبعة الامير سلطان بن عبد العزيز ج ٢ ص ١٤٢ ، ط دار المعرفة بيروت ، ج ٢ ص ١٢٠)


অনুবাদঃ ইমাম কুরতুবী রাহিমাহুল্লাহ বলেন, হাদিস শরীফ খানা থেকে প্রতিয়মান হয় যে, নবীজী হুযূর নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ হুজরা শরীফ হতে বের হওয়ার আগেই নামায (ইক্বামত) শুরু হয়ে যেত, যা হযরত জাবের ইবনে সামুরা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত হাদিসের বিপরীত। (হযরত জাবের ইবনে সামুরা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত হাদিস শরীফ খানা হলো,) ‘হযরত বেলাল রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুজরা শরীফ হতে বের হওয়ার পূর্বে ইকামত বলতেন না। যা ইমাম মুসলিম রাহিমাহুল্লাহ তাখরিজ করেছেন। আর এ দুই বর্ণনার সামঞ্জস্য এভাবে হয় যে, হযরত বেলাল রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হুযুরের আগমনের দিকে থাকিয়ে থাকতেন। তিনি হুযুরকে দেখা মাত্রই ইকামত শুরু করতেন। অতঃপর লোকেরা হুজুরকে দেখে দাঁড়িয়ে যেতেন। আর হুজুর নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাতার ঠিক না করে নিজ স্থানে দাঁড়াতেন না।(ফতহুল বারী, তবআ আল আমীর সুলতান বিন আব্দিল আযীয ২য় জিলদ পৃষ্ঠা নং ১৪২, দারুল মা’রেফাহ ২য় জিলদ পৃষ্ঠা নং ১২০)


* দ্বিতীয় বক্তব্যঃ ইমাম বদরুদ্দীন আইনী হানাফী রাহিমাহুল্লাহ বলেন,


إِن معنى الحَدِيث أَن الْجَمَاعَة لَا يقومُونَ عِنْد الْإِقَامَة إلاَّ حِين يرَوْنَ أَن الإِمَام قَامَ. (عمدة القاري شرح صحيح البخاري ط دار الفكر بيروت ج ٥ ص ١٥٣)


অনুবাদঃ নিশ্চয়ই হাদিসের অর্থ হলো, ইক্বামতে দাঁড়াবেনা যতক্ষন না ইমাম দাঁড়িয়েছেন। (উমদাতুল কারী, দারুল ফিকর, ৫ম জিলদ ১৫৩ নং পৃষ্ঠা)


* তৃতীয় বক্তব্যঃ মুল্লা আলী ক্বারী হানাফী রাহিমাহুল্লাহ বলেন,


وَلَعَلَّهُ عَلَيْهِ السَّلَامُ كَانَ يَخْرُجُ مِنَ الْحُجْرَةِ بَعْدَ شُرُوعِ الْمُؤَذِّنِ فِي الْإِقَامَةِ، وَيَدْخُلُ فِي مِحْرَابِ الْمَسْجِدِ عِنْدَ قَوْلِهِ، حَيَّ عَلَى الصَّلَاةِ. (مرقاة المفاتيح ،الناشر دار الفكر ج ٢ ص ٥٥٢ ، الناشر العلمية ج ٢ ص ٣١٨)


অনুবাদঃ আর সম্ভবত নবী করিম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুজরা শরীফ থেকে বের হতেন মুয়াযযিন ইক্বামত শুরু করার পর এবং ‘হাইয়্যা আলাছ ছালাহ’ বলার সময় তিনি মেহরাবে প্রবেশ করতেন। আর এজন্যেই আমাদের ইমামগণ অভিমত পেশ করেছেন, ‘হাইয়্যা আলাছ ছালাহ’ বলার সময় ইমাম ও মুক্তাদিগণ দাঁড়াবেন। আর ‘ক্বাদ ক্বামাতিছ ছালাহ’ বলার সময় নামায শুরু করবে। (মিরকাতুল মাফাতীহ, দারুল ফিকর এর ছাপা, ২য় জিলদ ৫৫২ নং পৃষ্ঠা)


এ ছাড়াও উনারা নিজ নিজ কিতাবে আরোও বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।


* হাদিস শরীফ নং দুই.


حَدَّثَنَا هَارُونُ بْنُ مَعْرُوفٍ، وَحَرْمَلَةُ بْنُ يَحْيَى، قَالَا: حَدَّثَنَا ابْنُ وَهْبٍ، أَخْبَرَنِي يُونُسُ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، قَالَ: أَخْبَرَنِي أَبُو سَلَمَةَ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ عَوْفٍ، سَمِعَ أَبَا هُرَيْرَةَ، يَقُولُ: أُقِيمَتِ الصَّلَاةُ، فَقُمْنَا، فَعَدَّلْنَا الصُّفُوفَ، قَبْلَ أَنْ يَخْرُجَ إِلَيْنَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَأَتَى رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى إِذَا قَامَ فِي مُصَلَّاهُ قَبْلَ أَنْ يُكَبِّرَ، ذَكَرَ فَانْصَرَفَ، وَقَالَ لَنَا: مَكَانَكُمْ، فَلَمْ نَزَلْ قِيَامًا نَنْتَظِرُهُ حَتَّى خَرَجَ إِلَيْنَا، وَقَدِ اغْتَسَلَ يَنْطُفُ رَأْسُهُ مَاءً، فَكَبَّرَ فَصَلَّى بِنَا. (صحيح مسلم ٦٠٥)


অনুবাদঃ সর্বাদিক হাদিস বর্ণনাকারী ছাহাবী হযরত আবূ হুরায়রাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার সলাতের জন্য ইকামাত দেয়া হলো এবং রসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে পৌছার আগেই আমরা দাঁড়িয়ে কাতার সোজা করে নিলাম। এরপর রসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে সলাতের স্থানে দাঁড়ালেন। তখনও তাকবীর বলা হয়নি। ইতোমধ্যে তার কিছু স্মরণ হলে তিনি আমাদেরকে বললেন, তোমরা নিজ-নিজ স্থানে অপেক্ষা করতে থাক। এ কথা বলে তিনি ফিরে গেলেন। আমরা তার পুনরায় না আসা পর্যন্ত দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে থাকলাম। ইতোমধ্যে তিনি গোসল করে আসলেন। তখনও তার মাথা থেকে পানি ফোঁটা ফোঁটা ঝরে পড়ছিল। এবার তিনি তাকবীরে তাহরীমা বলে আমাদের  ছালাত আদায় করলেন। (ছহিহ মুসলিম হাদিস নং ৬০৫)


সনদঃ ছহিহ।


শিক্ষাঃ উক্ত হাদিস শরীফ খানা থেকে আমরা শিখতে পারি,


ক. ছাহাবায়ে কেরাম ইক্বামত হলেই দাঁড়িয়ে যেতেন।


খ. এখানেও ‘হাইয়্যা আলাছ ছালাহ’ বা, ‘হাইয়্যা আলাল ফালাহ’ শুনে দাঁড়ানোর প্রমাণ নেই।


* হাদিস শরীফ নং তিন.


وَحَدَّثَنِي سَلَمَةُ بْنُ شَبِيبٍ، حَدَّثَنَا الْحَسَنُ بْنُ أَعْيَنَ، حَدَّثَنَا زُهَيْرٌ، حَدَّثَنَا سِمَاكُ بْنُ حَرْبٍ، عَنْ جَابِرِ بْنِ سَمُرَةَ، قَالَ: كَانَ بِلَالٌ يُؤَذِّنُ إِذَا دَحَضَتْ، فَلَا يُقِيمُ حَتَّى يَخْرُجَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَإِذَا خَرَجَ أَقَامَ الصَّلَاةَ حِينَ يَرَاهُ. (صحيح مسلم ٦٠٦ ، سنن ابي داود ٥٣٧ ، سنن الترمذي رقم ٢٠٢ ، مصنف عبد الرزاق رقم ١٨٣٠ و ١٨٣٧ ، مسند أحمد ، الناشر مؤسسة الرسالة برقم ٢٠٨٠٤ ، ابن خزيمة رقم ١٥٢٥)


অনুবাদঃ হযরত জাবির ইবনু সামুরাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সূর্য ঢলে পড়লেই বিলাল যোহরের আযান দিতেন। কিন্তু রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হয়ে না আসা পর্যন্ত এবং তাকে না দেখা পর্যন্ত ইক্বামত দিতেন না। বের হয়ে আসার পর তিনি তাঁকে দেখে তখনই কেবল ইক্বামত দিতেন। (ছহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৬০৬, সুনান আবি দাউদ হাদিস নং ৫৩৭, সুনান আত তিরমিযি হাদিস নং ২০২, আল মুছান্নাফ হাদিস নং ১৮৩০,৩৭, মুসনাদ ইমাম আহমদ, মু’সাসাতুর রেসালাহ ২০৮০৪, ছহিহ ইবনে খুজাইমা হাদিস নং ১৫২৫)


সনদঃ ছহিহ।


শিক্ষাঃ উক্ত হাদিস শরীফ খানা থেকে আমরা শিখতে পারি,


ক. হুযুর হুজরা শরীফ থেকে বের হওয়ার আগে হযরত বেলাল রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ইক্বামত বলতেন না।

খ. হুযুর তাশরীফ আনতেছেন দেখামাত্রই হযরত বেলাল ইক্বামত শুরু করতেন।


গ. এখানেও ‘হাইয়্যা আলাছ ছালাহ’ বা, ‘হাইয়্যা আলাল ফালাহ’ শুনে দাঁড়ানোর প্রমাণ নেই।


* হাদিস শরীফ নং চার.


وَحَدّثَنِيْ اِبْرَاهِمُ بْنُ مُوْسَى ، أَخْبَرَنَا الْوَلِيْدُ بْنُ مٌسْلِمٍ ، عَنِ الأَوْزَاعِيِّ ، عَنِ الزُّهْرِيِّ قَالَ :  حَدّثَنِيْ أبُوْ سَلَمَةَ ، عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ ؛ اَنَّ الصَّلَاةَ كَانَتْ تُقَامُ لِرَسُوْلِ اللهِ صلّى الله عليه وسلّم. فَيَأْخُذُ النَّاسُ مَصَافَّهُمْ قَبْلَ أَنْ يَقُوْمَ النَّبِيُّ صلّى الله عليه وسلّم مَقَامَهُ. (صحيح مسلم ط الهند ، كتاب المساجد و مواضع الصلاة ، باب متى يقوم الناس للصلاة ، ج ١ ص ٢٢٠ ، محمد فواد عبد الباقي ص ٤٢٣)


অনুবাদঃ হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নিশ্চয়ই হযরত রসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার জন্য নামাজ কায়েম করা হতো, অর্থাৎ, নামাযের ইক্বামত দেয়া হতো (নবীজী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখনো হুজরা শরীফে)। নবীজী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ নামাযের স্থানে দাঁড়ানোর আগেই লোকেরা (ছাহাবায়ে কেরাম গণ) তাদের নামাযের কাতার গ্রহণ করতেন, অর্থাৎ, কাতারে দাঁড়িয়ে যেতেন। (ছহিহ মুসলিম ত্ববআ আল হিন্দ, কিতাবুল মাসাজিদ ওয়া মাওয়াদ্বিউছ ছালাহ, বাবঃ মাতা ইয়াকুমুন নাসু লিছ ছালাহ, ১ম জিলদ ২২০ নং পৃষ্ঠা, তাহকিক মুহাম্মদ ফুওয়াদ আব্দুল বাকী ৪২৩ নং প্ররষ্ঠা, অধ্যায়ের ১৫৯ নং হাদিস)


সনদঃ ছহিহ।


শিক্ষাঃ উক্ত হাদিস শরীফ খানা থেকে আমরা শিখতে পারি,


ক. ইক্বামত শুরুর সাথে সাথেই ছাহাবায়ে কেরাম দাঁড়িয়ে কাতার সোজা করে নিতেন। তারপরেই হুজুর নিজ স্থানে যেতেন, নামায শুরু করতেন।


খ. এখানেও ‘হাইয়্যা আলাছ ছালাহ’ বা, ‘হাইয়্যা আলাল ফালাহ’ শুনে দাঁড়ানোর প্রমাণ নেই।


* হাদিস শরীফ নং পাঁচ.


عَن بن شِهَابٍ أَنَّ النَّاسَ كَانُوا سَاعَةَ يَقُولُ الْمُؤَذِّنُ اللَّهُ أَكْبَرُ يَقُومُونَ إِلَى الصَّلَاةِ فَلَا يَأْتِي النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَقَامَهُ حَتَّى تَعْتَدِلَ الصُّفُوفُ. (فتح الباري بشرح صحيح البخاري ، طبعة الامير سلطان بن عبد العزيز ج ٢ ص ١٤٢ ، ط دار المعرفة بيروت ، ج ٢ ص ١٢٠)


অনুবাদঃ ইমাম আব্দুল্লাহ ইবনে শিহাব আজ জুহরী রাহিমাহুল্লাহ হতে বর্ণিত। মুয়াযযিন ‘আল্লাহু আকবার’ বলার সাথে সাথে লোকেরা ছালাতের জন্য দাঁড়িয়ে যেতেন। কিন্তু নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাতার সোজা হওয়ার আগ পর্যন্ত নিজ স্থানে যেতেন না।(ফতহুল বারী, তবআ আল আমীর সুলতান বিন আব্দিল আযীয ২য় জিলদ পৃষ্ঠা নং ১৪২, দারুল মা’রেফাহ ২য় জিলদ পৃষ্ঠা নং ১২০) 


সনদঃ ছহিহ।


শিক্ষাঃ উক্ত হাদিস শরীফ খানা থেকে আমরা শিখতে পারি, ইক্বামত হলেই ছাহাবী গণ দাঁড়িয়ে যেতেন তারপর কাতার সোজা হলেই দয়াল নবীজী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামায শুরু করতেন।


* হাদিস শরীফ নং ছয়.


حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الْمُثَنَّى، ثنا حَجَّاجُ بْنُ فَرُّوخَ، عَنِ الْعَوَّامِ بْنِ حَوْشَبٍ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي أَوْفَى، قَالَ: كَانَ بِلالٌ إِذَا قَالَ: قَدْ قَامَتِ الصَّلاةُ، نَهَضَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالتَّكْبِيرِ. (مسند البزار رقم ٣٣٧١ ، كشف الأستار رقم ٥٢٠)


অনুবাদঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আবি আওফা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত বিলাল রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু যখন ‘ক্বাদ ক্বা-মাতিছ ছালাহ’ বলতেন তখন হযরত রসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকবীরে তাহরীমার জন্য ওঠতেন। (মুসনাদুল বাযযার, হাদিস নং ৩৩৭১, কাশফুল আসতার হাদিস নং ৫২০)


সনদঃ হাসান ছহিহ।


শিক্ষাঃ উক্ত হাদিস শরীফ খানা থেকে আমরা শিখতে পারি,


ক. এ হাদিস শরীফ থেকে বুঝা যায়, হুযুর ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘ক্বাদ ক্বা-মাতিছ ছালাহ’ শুনে ওঠতেন।


খ. হতে পারে তিনি ‘ক্বাদ ক্বা-মাতিছ ছালাহ’ শুনে হুজরা শরীফ হতে বের হতেন।


গ. উক্ত হাদিস উপরে বর্ণিত হাদিস সমূহের সাথে সামঞ্জস্য বিধান ছাড়া আমলের সুযোগ নেই।


ঘ. অথবা এটা পৃথক কোন ঘটনা থাকতে পারে, আর পৃথক কোন ঘটনাকে সুন্নত বলা হয়না।


* এ ছাড়াও ফতহুল বারী ফি ছহিহিল বুখারী কিতাবে আরোও বর্ণিত হয়েছে,


عَنْ سَعِيدِ بْنِ الْمُسَيَّبِ قَالَ إِذَا قَالَ الْمُؤَذِّنُ اللَّهُ أَكْبَرُ وَجَبَ الْقِيَامُ وَإِذَا قَالَ حَيَّ عَلَى الصَّلَاةِ عُدِّلَتِ الصُّفُوفُ وَإِذَا قَالَ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ كَبَّرَ الْإِمَامُ وَعَنْ أَبِي حَنِيفَةَ يَقُومُونَ إِذَا قَالَ حَيَّ عَلَى الْفَلَاحِ فَإِذَا قَالَ قَدْ قَامَتِ الصَّلَاةُ كَبَّرَ الْإِمَامُ. وَأَمَّا إِذَا لَمْ يَكُنِ الْإِمَامُ فِي الْمَسْجِدِ فَذَهَبَ الْجُمْهُورُ إِلَى أَنَّهُمْ لَا يَقُومُونَ حَتَّى يَرَوْهُ. (فتح الباري بشرح صحيح البخاري ، طبعة الامير سلطان بن عبد العزيز ج ٢ ص ١٤١ - ١٤٢ ، ط دار المعرفة بيروت ، ج ٢ ص ١٢٠)


অনুবাদঃ সাইয়্যিদুত তাবেয়ীন, সাহাবা যোগের প্রসিদ্ধ মুফতী, আবু মুহাম্মাদ সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যাব রাহিমাহুল্লাহ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মুয়াযযিন যখন ইকামত শুরু করবে তখনই উপস্থিত মুছল্লীদের জন্য দাঁড়িয়ে যাওয়া ওয়াজিব। আর যখন ‘হাইয়্যা আলাছ ছালাহ’ বলবে, তখন কাতার ঠিক করে নেবে। এবং ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলার সাথে সাথে ইমাম তাকবীরে তাহরীমা বলবেন। আর ইমাম আজম আবু হানীফা রাহিমাহুল্লাহ থেকে বর্ণিত আছে, মুয়াযযিন যখন ‘হাইয়্যা আলাল ফালাহ’ বলবে, তখন সকলে দাঁড়িয়ে যাবে। অতঃপর সে যখন ‘ক্বাদ ক্বা-মাতিছ ছালাহ’ বলবে, ইমাম তখন তাকবীরে তাহরীমা বলবেন। কিন্তু যদি ইমাম যদি মসজিদের বাহিরে থাকেন, তাহলে জুমহুর উলামার মতে ইমামকে দেখার আগ পর্যন্ত কেউই দাঁড়াবেনা; [সকলেই বসে অপেক্ষা করবে]। (ফতহুল বারী বি শারহি ছাহীহিল বুখারী, তবআতুল আমির ২য় জিলদ ১৪১ ও ৪২ নং পৃষ্ঠা, দারুল মা’রিফাহ এর ছাপা ২য় জিলদ ১২০ নং পৃষ্ঠা)


* শিক্ষাঃ এখানে আমরা যা পেলাম তা হলো,


ক. তাবেয়ী সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যাব এর (রাহিমাহুল্লাহ) বক্তব্যে পরিস্কার বুঝা যায়, মুয়াযযিন ইক্বামত শুরু করলেই দাঁড়ানো ওয়াজিব।


খ. এখানে ইমাম আ’জম আবু হানিফা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর ৩টি বক্তব্য পরিলক্ষিত হয়,


০১. ‘হাইয়্যা আলাল ফালাহ’ বলার সময় দাঁড়ানো।


০২. ‘ক্বাদ ক্বা-মাতিছ ছালাহ’ বলার সময় তাকবীর তাহরীমাহ বলা।


০৩. ইমাম মসজিদের বাহিরে থাকলে তাকে দেখার আগ পর্যন্ত বসে অপেক্ষা করা।


* ইমাম নব্বী রাহিমাহুল্লাহ তার শরহু মুসলিমে বলেন,


وَاخْتَلَفَ الْعُلَمَاءُ مِنَ السَّلَفِ فَمَنْ بَعْدَهُمْ مَتَى يَقُومُ النَّاسُ لِلصَّلَاةِ وَمَتَى يُكَبِّرُ الْإِمَامُ فَمَذْهَبُ الشَّافِعِيِّ رَحِمَهُ اللَّهُ تَعَالَى وَطَائِفَةٍ أَنَّهُ يستحب أن لا يَقُومَ أَحَدٌ حَتَّى يَفْرُغَ الْمُؤَذِّنُ مِنَ الْإِقَامَةِ وَنَقَلَ الْقَاضِي عِيَاضٌ عَنْ مَالِكٍ رَحِمَهُ اللَّهُ تَعَالَى وَعَامَّةِ الْعُلَمَاءِ أَنَّهُ يُسْتَحَبُّ أَنْ يَقُومُوا إِذَا أَخَذَ الْمُؤَذِّنُ فِي الْإِقَامَةِ وَكَانَ أَنَسٌ رَحِمَهُ اللَّهُ تَعَالَى يَقُومُ إِذَا قَالَ الْمُؤَذِّنُ قَدْ قَامَتِ الصَّلَاةُ وَبِهِ قَالَ أَحْمَدُ رَحِمَهُ اللَّهُ تَعَالَى وَقَالَ أَبُو حَنِيفَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ وَالْكُوفِيُّونَ يَقُومُونَ فِي الصَّفِّ إِذَا قَالَ حَيَّ عَلَى الصَّلَاةِ فَإِذَا قَالَ قَدْ قَامَتِ الصَّلَاةُ كَبَّرَ الْإِمَامُ وَقَالَ جُمْهُورُ الْعُلَمَاءِ مِنَ السَّلَفِ وَالْخَلَفِ لَا يُكَبِّرُ الْإِمَامُ حَتَّى يَفْرُغَ الْمُؤَذِّنُ مِنَ الْإِقَامَةِ. (المنهاج شرح صحيح مسلم بن الحجاج، الناشر دار إحياء التراث العربي، ج ٥ ص ١٠٣)


অনুবাদঃ ইকামতে কখন লোকেরা দাঁড়াবে আর কখন ইমাম তাকবীর বলবেন তা নিয়ে সালাফে ছালেহীন ও তদপরবর্তী উলামায়ে কেরামগণ এখতেলাফ করেছেন। এ ক্ষেত্রে ইমাম শাফেয়ী রাহিমাহুল্লাহ ও কিছু সংখ্যক উলামায়ে কেরামের মাযহাব মতে মুস্তাহাব হলো, মুয়াযযিন ইকামত হতে ফারিগ হওয়ার পূর্বে না দাঁড়ানো। কাজী ইয়াজ রাহিমাহুল্লাহ ইমাম মালিক রাহিমাহুল্লাহ ও অনেক উলামার বরাতে বর্ণনা করেন যে, মুয়াযযিন ইকামত শুরু করলেই সকলে দাঁড়িয়ে যাবে। আর এটাই মুস্তাহাব। আর আনাস রাহিমাহুল্লাহ (সম্ভবত ছাহাবী হযরত আনাছ বিন মালিক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হবেন) মুয়াযযিন ‘ক্বাদ ক্বা-মাতিছ ছালাহ’ বললেই দাঁড়াতেন আর এটা ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রাহিমাহুল্লাহ এরও অভিমত। আর ইমাম আবু হানীফা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এবং কুফাবাসীরা কাতারে দাঁড়াতেন ‘হাইয়্যা আলাছ ছালাহ’ বলার পর আর উনাদের অভিমত অনুসারে ‘কাদ কা-মাতিছ ছালাহ’ বললেই ইমাম তাকবীর বলতেন। কিন্তু সালাফ ও খালাফের জুমহুর উলামায়ে কেরামের অভিমত হলো, মুয়াযযিন ইকামত শেষ করার আগে ইমাম তাকবীর বলবেন না। (আল মিনহাজ শরহু ছহিহ মুসলিম ইবনুল হাজ্জাজ, দারু ইহয়াউত তুরাস, ৫ম জিলদ ১০৩ নং পৃষ্ঠা)


* ইমাম বদরুদ্দী আইনী হানাফী রাহিমাহুল্লাহ তার শরাহ গ্রন্থ ‘উমদাতুল ক্বারী’ তে বলেন,


٠١. روى مُسلم من حَدِيث أبي هُرَيْرَة: (أُقِيمَت الصَّلَاة فقمنا فعدلنا الصُّفُوف قبل أَن يخرج إِلَيْنَا رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم). وَفِي رِوَايَة : (إِن الصَّلَاة كَانَت تُقَام لرَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم، فَيَأْخُذ النَّاس مَصَافهمْ قبل أَن يقوم النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم مقَامه) . وَفِي رِوَايَة جَابر بن سَمُرَة : (كَانَ بِلَال يُؤذن، إِذا دحضت الشَّمْس، فَلَا يُقيم حَتَّى يخرج النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم، فَإِذَا خَرَجَ أَقَامَ الصَّلَاةَ حِينَ يَرَاهُ). { عمدة القاري شرح صحيح البخاري ط دار الفكر بيروت ج ٥ ص ١٥٤}


অনুবাদঃ হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে ইমাম মুসলিম রেওয়ায়াত করেছেন, (হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন) ‘নবীজী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুজরা শরীফ হতে বের হওয়ার পূর্বেই নামাযের ইক্বামত হতো, আমরা কাতারও ঠিক করে নিতাম’। অন্য বর্ণনায় আছে, ‘রাসূলে পাক ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার জন্য নামাযের ইকামত দেয়া হতো, হুজুর নিজ স্থানে যাওয়ার আগেই লোকেরা কাতার ঠিক করে নিতেন’। অন্য বর্ণনায় হযরত জাবের ইবনে সামুরা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে বর্ণিত আছে, ‘সূর্য ঢলে পড়লেই বিলাল যোহরের আযান দিতেন। কিন্তু রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হয়ে না আসা পর্যন্ত এবং তাকে না দেখা পর্যন্ত ইকামাত দিতেন না। বের হয়ে আসার পর তিনি তাঁকে দেখে তখনই কেবল ইকামাত দিতেন।(উমদাতুল কারী শরহু ছহিহ আল বুখারী লি বদরুদ্দীন আইনী আল হানাফী, দারুল ফিকর বৈরুতের ছাপা, ৫ম জিলদ ১৫৪ নং পৃষ্ঠা)


٠٢. وَقد اخْتلف السّلف مَتى يقوم النَّاس إِلَى الصَّلَاة؟ فَذهب مَالك وَجُمْهُور الْعلمَاء إِلَى أَنه لَيْسَ لقيامهم حد، وَلَكِن اسْتحبَّ عامتهم الْقيام إِذا أَخذ الْمُؤَذّن فِي الْإِقَامَة، وَكَانَ أنس، رَضِي الله تَعَالَى عَنهُ، يقوم إِذا قَالَ الْمُؤَذّن: قد قَامَت الصَّلَاة وَكبر الإِمَام، وَحَكَاهُ ابْن أبي شيبَة عَن سُوَيْد بن غَفلَة، وَكَذَا قيس بن أبي حَازِم وَحَمَّاد. (عمدة القاري شرح صحيح البخاري ط دار الفكر بيروت ج ٥ ص ١٥٣)


অনুবাদঃ নামাযে লোকেরা কখন দাঁড়াবে তা নিয়ে সালাফগণ ইখতেলাফ করেছেন। সুতরাং ইমাম মালিক রাহিমাহুল্লাহ সহ জুমহুরের নিকট ইকামতে দাঁড়ানোর সময় নির্ধারিত নেই। কিন্তু উনাদের মতে মুয়াজ্জিন ইকামত শুরু করলেই দাঁড়িয়ে যাওয়াই মুস্তাহাব। হযরত আনাস বিন মালিক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু’র মতে মুয়াজ্জিন ‘ক্বাদ ক্বা-মাতিছ ছালাহ’ বলার পর সকলে দাঁড়িয়ে যাবে আর ইমাম তাকবীর বলবেন। ইবনু আবি শায়বাহ সুওয়াইদ বিন গাফলাহ, কায়স বিন আবি হাযিম ও হাম্মাদ রাহিমাহু্মুল্লাহ সূত্রে তাই বর্ণনা করেছেন।(উমদাতুল কারী শরহু ছহিহ আল বুখারী লি বদরুদ্দীন আইনী আল হানাফী, দারুল ফিকর বৈরুতের ছাপা, ৫ম জিলদ ১৫৩ নং পৃষ্ঠা)


শিক্ষাঃ জুমহুরের মতে ইক্বামতের শুরুতেই দাঁড়িয়ে যাওয়া মুস্তাহাব।


٠٣. وَعَن سعيد بن الْمسيب وَعمر بن عبد الْعَزِيز: إِذا قَالَ الْمُؤَذّن: الله إكبر، وَجب الْقيام، وَإِذا قَالَ: حَيّ على الصَّلَاة، اعتدلت الصُّفُوف، وَإِذا قَالَ: لَا إِلَه إِلَّا الله، كبر الإِمَام. وَذَهَبت عَامَّة الْعلمَاء إِلَى أَنه: لَا يكبر حَتَّى يفرغ الْمُؤَذّن من الْإِقَامَة. (عمدة القاري شرح صحيح البخاري ط دار الفكر بيروت ج ٥ ص ١٥٣)


অনুবাদঃ আর সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যাব এবং উমর বিন আব্দুল আযীয রাহিমাহুমুল্লাহ থেকে বর্ণিত আছে, মুয়াযযিন যখন ‘আল্লাহু আকবার’ বলবে (ইকামত শুরু করবে) তখনই দাঁড়িয়ে যাওয়া ওয়াজিব। আর সে যখন ‘হাইয়্যা আলাছ ছালাহ’ বলবে তখন ছফ সমূহ ঠিক করে নেবে। আর ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলে ইকামত শেষ করতেই ইমাম তাকবীর (তাহরীমা) বলবেন। আর উলামায়ে কেরামের প্রায় সকলেরই অভিমত হলো, মুয়াযযিন ইকামত শেষ না করা পর্যন্ত তাকবীর (তাহরীমা) বলবেনা। (উমদাতুল কারী শরহু ছহিহ আল বুখারী লি বদরুদ্দীন আইনী আল হানাফী, দারুল ফিকর বৈরুতের ছাপা, ৫ম জিলদ ১৫৩ নং পৃষ্ঠা)


* শিক্ষাঃ তাবেয়ী সায়ীদ ইবনুল মুসাইয়্যাব রাহিমাহুল্লাহ এর মতানুসারে ইক্বামতের শুরুতে দাঁড়িয়ে যাওয়া ওয়াজিব। আর ইক্বামত শেষ হলেই তাকবীর তাহরীমাহ বাধতে হবে।


٠٤. وَمذهب الشَّافِعِي وَطَائِفَة أَنه يسْتَحبّ أَن لَا يقوم حَتَّى يفرغ الْمُؤَذّن من الْإِقَامَة، وَهُوَ قَول أبي يُوسُف. (عمدة القاري شرح صحيح البخاري ط دار الفكر بيروت ج ٥ ص ١٥٣)


অনুবাদঃ আর ইমাম মুহাম্মদ ইদরীস আশ শাফেয়ী রাহিমাহুল্লাহ কিছু সংখ্যক ইমামের মতে মুস্তাহাব হলো, মুয়াযযিন ইকামত শেষ করার পূর্বে না দাঁড়ানো। আর এটা ইমাম আবু ইউসুফ রাহিমাহুল্লাহ’রও অভিমত।(উমদাতুল কারী শরহু ছহিহ আল বুখারী লি বদরুদ্দীন আইনী আল হানাফী, দারুল ফিকর বৈরুতের ছাপা, ৫ম জিলদ ১৫৩ নং পৃষ্ঠা)


শিক্ষাঃ শাফেয়ী মাযহাব ও ইমাম আবু ইউসূফ রাহিমাহুল্লাহ এর মতে, ইক্বামত শেষ হওয়ার পরেই দাঁড়াবে।


٠٥. وَإِذا لم يكن الإِمَام فِي الْمَسْجِد فَذهب الْجُمْهُور إِلَى أَنهم لَا يقومُونَ حَتَّى يروه. (عمدة القاري شرح صحيح البخاري ط دار الفكر بيروت ج ٥ ص ١٥٤)


অনুবাদঃ আর ইমাম যদি মসজিদে না থাকেন, তাহলে জুমহুরের মতে তাঁকে দেখার আগে কেউ দাঁড়াবেনা।(উমদাতুল কারী শরহু ছহিহ আল বুখারী লি বদরুদ্দীন আইনী আল হানাফী, দারুল ফিকর বৈরুতের ছাপা, ৫ম জিলদ ১৫৪ নং পৃষ্ঠা)


* শিক্ষাঃ ইমাম মসজিদের বাহিরে থাকলে তাকে দেখার আগ পর্যন্ত বসে অপেক্ষা করা।


** এতক্ষনে আমরা যা বুঝলাম, তা হলো –


০১. রসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুজরা শরীফ থেকে বের হওয়ার আগে ছাহাবায়ে কেরাম দাঁড়াতেন না।


দাঁড়ালে কি হয় ?


* দাঁড়ালে ক্বিয়ামে হুকমী (আল্লাহ তাআলার ইবাদতের উদ্দেশ্যে ক্বিয়াম করা) আর ক্বিয়ামে তা’জিমী একাকার হওয়ার সম্ভাবনা পয়াদা হয়, তাই নবীজী দাঁড়াতে নিষেধ করেছেন।


* ঘড়ীর কাটায় সময় নির্ধারিত ছিলনা, সম্পূর্ণ হুজুরের (ইমাম) এখতিয়ার ছিল। তাই দীর্ঘ্য সময় দাঁড়িয়ে ছাহাবীদের কষ্ট হবে ভেবে নিষেধ করেছেন।


০২. ইমাম সাহেবের হুজরা মসজিদে থাকা সুন্নত।


০৩. ইমাম সাহেবের জন্য অপেক্ষা করা সুন্নত।


০৪. ইমাম সাহেব চলে আসলে সকলেরই দাঁড়িয়ে যাওয়া সুন্নত।


০৫. ইমাম সাহেব জামাতের টাইমের আগে মসজিদে এসে বসে অপেক্ষা করা সুন্নতের খেলাফ।


০৬. টাইম হয়ে গেলে যদি ইক্বামত হয়ে যায় তারপরেও ইমাম সাহেব আসার আগ পর্যন্ত অপেক্ষা করা।


০৭. ইমাম আবু হানিফা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর বক্তব্য অনুযায়ী ‘হাইয়্যা আলাল ফালাহ’ বললে দাঁড়ানো মুস্তাহাব হলে ‘ক্বাদ ক্বা-মাতিছ ছালাহ’ বলার সময় তাকবীরে তাহরীমাহ বলে নামাযও শুরু করতে হয়!


০৮. যদি তাই করা হয়, তাহলে নামাযের কাতার কখন ঠিক করা হবে ? আর মৌখিক নিয়তই বা কখন করবেন ?


** যদি বলেন, প্রথমে দাঁড়িয়ে কাতার ঠিক করে বসে যাব। পরে ‘হাইয়্যা আলাল ফালাহ’ শুনে দাঁড়িয়ে যাব।

তাহলে এখানে আমাদের জিজ্ঞাসাঃ


* এটা কি নবীর তরীকা ?


* কোন ছাহাবীর তরীকা ?


* ইমাম মুজতাহিদীন গণের কে এই তরিক্বার আবিস্কর্তা ?


* এটা কি মুস্তানাদ কোন কিতাবে আছে ??


প্রিয় পাঠক ! শুধুই কি ‘হাইয়্যা আলাল ফালাহ’? আমরা এতগুলো সুন্নতের কথা বললাম, এসব কি কোন বুজুর্গ ওয়াজ করেছেন ? এতসব সুন্নত মানার চেস্টা করেছেন ? এতগুলো বাদ দিয়ে শুধু একটা কেন ? সেটাই জানার বিষয়।


** ফিক্বহী দালায়েল


প্রিয় পাঠক ! এতক্ষণে আমরা জানতে পেরেছি, নামাযে দাঁড়ানোর মূল সুন্নত হলো, ইমাম আসার সাথে সাথে ইক্বামত হবে আর এর সাথে সকলে দাঁড়িয়ে কাতার সোজা করে নেবে। ইমাম সাহেবগণ আগে থেকে মসজিদে এসে বসে থাকবেন না। সুন্নত পড়ার থাকলে উনি উনার হুজরাতেই পড়বেন। এটাই সুন্নত এর বিপরীত সুন্নতের খেলাফ।


তারপরেও আমাদের মাযহাবে কিছু নিয়ম কানুন বলে দেয়া হয়েছে। অনেকে এগুলো না বুঝে ইচ্ছামত ফতওয়া জারী করে থাকেন। নিম্নে বিস্তারিত তুলে ধরা হলো।


* ইমাম আজম আবু হানীফা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর প্রধান দুই ছাত্রের একজন ইমাম মুহাম্মাদ ইবনুল হাসান আশ শাইবানী রাহিমাহুল্লাহ (ইন্তেকাল ১৮৯ হিজরী) এর অভিমতঃ


٠١. مُحَمَّدٌ، قَالَ: أَخْبَرَنَا أَبُو حَنِيفَةَ، قَالَ حَدَّثَنَا طَلْحَةُ بْنُ مُصَرِّفٍ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ، قَالَ إِذَا قَالَ الْمُؤَذِّنُ : حَيَّ عَلَى الْفَلَاحِ، فَإِنَّهُ يَنْبَغِي لِلْقَوْمِ أَنْ يَقُومُوا فَيُصَفُّوا، فَإِذَا قَالَ الْمُؤَذِّنُ قَدْ قَامَتِ الصَّلَاةُ، كَبَّرَ الْإِمَامُ. (كتاب الآثار لمحمد بن الحسن الشيباني ، ج ١ ص ١٠٧)


অনু্বাদঃ ইমাম মুহাম্মাদ ইবনুল হাসান আশ শাইবানী রাহিমাহুল্লাহ (ইন্তেকাল ১৮৯ হিজরী) বলেন, আমাদেরকে সংবাদ দিয়েছেন ইমাম আবু হানীফা রাহিমাহুল্লাহ। তিনি বলেন, আমার কাছে বর্ণনা করেছেন, ইবরাহীম নখঈ রাহিমাহুল্লাহ সূত্রে তালহা বিন মুছাররিফ। ইবরাহীম নখঈ রাহিমাহুল্লাহ বলেন, মুয়াযযিনের ‘হাইয়্যা আলাল ফালাহ’ শুনেই সকলের দাঁড়িয়ে কাতার সোজা করে নেয়া উচিত। অতঃপর মুয়াযযিন যখন ‘ক্বাদ ক্বা-মাতিছ ছালাহ’ বলবে ইমাম তখন তাকবীর বলবেন।(কিতাবুল আছার লিশ শাইবানী ১ম জিলদ ১০৭ পৃষ্ঠা)


٠٢. قَالَ مُحَمَّدٌ: يَنْبَغِي لِلْقَوْمِ إِذَا قَالَ الْمُؤَذِّنُ حَيَّ عَلَى الْفَلاحِ أَنْ يَقُومُوا إِلَى الصَّلاةِ فَيَصُفُّوا. (موطأ مالك برواية محمد بن الحسن الشيباني ، الناشر القاهرة و العلمية ، ص ٥٦  برقم ٩٦)


অনু্বাদঃ ইমাম মুহাম্মাদ ইবনুল হাসান আশ শাইবানী রাহিমাহুল্লাহ (ইন্তেকাল ১৮৯ হিজরী) বলেন, মুয়াযযিনের ‘হাইয়্যা আলাল ফালাহ’ শুনেই সকলের দাঁড়িয়ে কাতার সোজা করে নেয়া উচিত।(মুয়াত্তা ইমাম মালিক বি রিওয়ায়াতে ইমাম মুহাম্মাদ ইবনুল হাসান আশ শায়বানী, পৃষ্ঠা ৫৬, হাদিস নং ৯৬)


* ইমাম মুহাম্মাদ রাহিমাহুল্লাহ এখানে যা বর্ণনা করেছেন, তাতে يَنْبَغِي  বা উচিত কথাটি ক্লিয়ার আছে। আমাদের কথা হলো, সেই যামানায় ইমামগণ আজকের মত মুছল্লীদেরকে নিয়ে বসে থাকার সিস্টেম ছিল নাকি? আর সেই সময় উনাদের সাথে যারা থাকতেন প্রত্যেকেই দ্বীনী মাসআলাহ সম্পর্কে সজাগ ছিলেন। তাই তাদের পক্ষে যেকোন একটি আমল একযোগে করা কোন ব্যাপারই ছিলনা।

এরপরেও يَنْبَغِي  এর বিপরীত কাজ কোন মতেই মাকরূহ হওয়ার যোগ্য নয়।


* আল্লামা ইমাম আলা উদ্দীন আবু বকর ইবনে মাসউদ আল কাসানী আল হানাফী রাহিমাহুল্লাহ (ইন্তেকাল ৫৮৭ হিজরী) স্বীয় ‘বাদায়েউস সানায়ে ফি তারতীবিশ শারায়ে’ কিতাবে বলেন,


٠١. وَرُوِيَ عَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّهُ دَخَلَ الْمَسْجِدَ فَرَأَى النَّاسَ قِيَامًا يَنْتَظِرُونَهُ فَقَالَ مَا لِي أَرَاكُمْ سَامِدِينَ أَيْ وَاقِفِينَ مُتَحَيِّرِينَ وَلِأَنَّ الْقِيَامَ لِأَجْلِ الصَّلَاةِ وَلَا يُمْكِنُ أَدَاؤُهَا بِدُونِ الْإِمَامِ فَلَمْ يَكُنْ الْقِيَامُ مُفِيدًا، ثُمَّ إنْ دَخَلَ الْإِمَامُ مِنْ قُدَّامِ الصُّفُوفِ فَكَمَا رَأَوْهُ قَامُوا؛ لِأَنَّهُ كُلَّمَا دَخَلَ الْمَسْجِدَ قَامَ مَقَامَ الْإِمَامَةِ وَإِنْ دَخَلَ مِنْ وَرَاءِ الصُّفُوفِ فَالصَّحِيحُ أَنَّهُ كُلَّمَا جَاوَزَ صَفًّا قَامَ ذَلِكَ الصَّفُّ؛ لِأَنَّهُ صَارَ بِحَالٍ لَوْ اقْتَدَوْا بِهِ جَازَ فَصَارَ فِي حَقِّهِمْ كَأَنَّهُ أَخَذَهُ مَكَانَهُ. (بدائع الصنائع في ترتيب الرائع ، الناشر دار الكتب العلمية ، ج ١ ص ٢٠٠)


অনুবাদঃ হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত আছে, তিনি একবার মসজিদে প্রবেশ করে দেখলেন, লোকেরা তার জন্য দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন। এমতাবস্থায় তিনি বললেন, আমি তোমাদেরকে কিংকর্তব্য বিমূড় অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখছি কেন ? আর নিশ্চয়ই এ দাঁড়ানো নামাযেরই জন্য ! আর ইমাম ছাড়া তো তা আদায় করা যায়না। সুতরাং তোমাদের এ দাঁড়ানো কোন কাজের না। অতঃপর ইমাম যখন কাতারের সামনে দিয়ে আসবেন তখন তাকে দেখেই তোমরা দাঁড়িয়ে যাবে। কেননা ইমাম যখনই মসজিদে প্রবেশ করেন তখনই (নামায আদায়ের জন্যেই প্রবেশ করেন এবং) নিজ স্থানে দাঁড়িয়ে যাবেন। আর তিনি যদি কাতারে পেছন দিক দিয়ে প্রবেশ করেন তাহলে ছহিহ কথা হলো, যে কাতারই তিনই অতিক্রম করবেন তখনই তারা দাঁড়িয়ে যাবে। কেননা তিনি যে অবস্থায় আছেন তাতে তার ইক্তেদা করে নেয়াটা বৈধ হবে। কেননা তিনি তার নির্ধারিত স্থানই গ্রহন করবেন। (বাদায়েউস সানায়ে ফি তারতীবিশ শারায়ে, দারুল কুতুব আল ইলমিইয়্যাহ, ১ম জিলদ ২০০ পৃষ্ঠা)


* হানাফী মাযহাবের নির্ভর যোগ্য উক্ত কিতাব থেকে আমরা এ দলিলই পেলাম,


ইমাম মসজিদে প্রবেশের পুর্বে মুক্তাদির দাঁড়ানো নিষেধ। আর ইমামগণও নির্ধারিত সময়ের পূর্বে প্রবেশ করবেন না তা ই উক্ত বর্ণনায় প্রমাণীত।


٠٢. وَلَنَا أَنَّ قَوْلَهُ : حَيَّ عَلَى الْفَلَاحِ دُعَاءٌ إلَى مَا بِهِ فَلَاحُهُمْ وَأَمْرٌ بِالْمُسَارَعَةِ إلَيْهِ فَلَا بُدَّ مِنْ الْإِجَابَةِ إلَى ذَلِكَ وَلَنْ تَحْصُلَ الْإِجَابَةُ إلَّا بِالْفِعْلِ وَهُوَ الْقِيَامُ إلَيْهَا، فَكَانَ يَنْبَغِي أَنْ يَقُومُوا عِنْدَ قَوْلِهِ: حَيَّ عَلَى الصَّلَاةِ. (بدائع الصنائع في ترتيب الرائع ، الناشر دار الكتب العلمية ، ج ١ ص ٢٠٠)


অনুবাদঃ আর আমাদের দলিল হলো, মুয়াযযিনের আহ্বান ‘হাইয়্যা আলাল ফালাহ’- যা কল্যাণের দিকে আহ্বান করে। এবং এটা এমন এক আহ্বান যার প্রতি দ্রুত সাড়া দেওয়াই কর্তব্য। আর কার্য্যে বাস্তবায়ন ছাড়া এটার উদ্ধেশ্য বাস্তবায়ন হয়না। আর এটার বাস্তবায়ন হলো, (নামাযে) দাঁড়িয়ে যাওয়া। সুতরাং ‘হাইয়্যা আলাছ ছালাহ’ শুনেই সকলের দাঁড়িয়ে যাওয়াই উচিত। (বাদায়েউছ ছানায়ে ফি তারতীবিশ শারায়ে, দারুল কুতুব আল ইলমিইয়্যাহ, ১ম জিলদ ২০০ পৃষ্ঠা)


* দেখুন ইমাম কাসানী রাহিমাহুল্লাহ নিজেই বলেছেন, ‘হাইয়্যা আলাল ফালাহ’- যা কল্যাণের দিকে আহ্বান করে। এবং এটা এমন এক আহ্বান যার প্রতি দ্রুত সাড়া দেওয়াই কর্তব্য। তাই তাঁর মতে একটু আগে ‘হাইয়্যা আলাছ ছালাহ’ শুনেই সকলের দাঁড়িয়ে যাওয়াই উচিত। উনি ‘তাসাররুআন’ কথাটি বলেছেন। সুতরাং কেউ যদি আরেকটু আগেই দাঁড়িয়ে যায়, তাহলে তো আরোও ‘তাসাররুআন’ দ্রুততার সহিতই জবাব দেয়া হলো। তাহলে এটা কেন মাকরূহ হতে যাবে। মাকরূহ হলে তো ইমামের টাইমের আগে মসজিদে প্রবেশটাই মাকরূহ হবে।


* ফতওয়া আলমগীরী কিতাবে উল্লেখ আছে,


* আলমগীরীর প্রথম বক্তব্যঃ


٠١. إذَا دَخَلَ الرَّجُلُ عِنْدَ الْإِقَامَةِ يُكْرَهُ لَهُ الِانْتِظَارُ قَائِمًا وَلَكِنْ يَقْعُدُ ثُمَّ يَقُومُ إذَا بَلَغَ الْمُؤَذِّنُ قَوْلَهُ حَيَّ عَلَى الْفَلَاحِ. كَذَا فِي الْمُضْمَرَاتِ. (الفتاوى الهندية ، الناشر دار الفكر و ط الكبرى ، ج ١ ص ٥٧ ، الناشر العلمية ج ١ ص ٦٣ – ٦٤)


অনুবাদঃ ইকামতের সময় কোন মুসল্লী মসজিদে প্রবেশ করলে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করা মাকরুহ বরং সে বসে যাবে। মুয়াযযিন যখন ‘হাইয়্যা আলাল ফালাহ’ বলবে তখন সে পূনরায় দাঁড়াবে, মুজমিরাত গ্রন্থে তা উল্লেখ আছে।(ফতোয়ায়ে আলমগীরী, দারুল ফিকর এর ছাপা, ১ম জিলদ ৫৭ নং পৃষ্ঠা, দারুল কুতুব আল ইলমিয়্যাহ এর ছাপা, ১ম জিলদ ৬৩ নং পৃষ্ঠা)


* একই বক্তব্য শামী কিতাবে আছে,


وَيُكْرَهُ لَهُ الِانْتِظَارُ قَائِمًا، وَلَكِنْ يَقْعُدُ ثُمَّ يَقُومُ إذَا بَلَغَ الْمُؤَذِّنُ حَيَّ عَلَى الْفَلَاحِ انْتَهَى هِنْدِيَّةٌ عَنْ الْمُضْمَرَاتِ. (حاشية ابن عابدين ط دار الفكر ج ١ ص ٤٠٠)


অনুবাদঃ দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করা মাকরূহ, বরং বসে থাকবে। আর মুয়াজ্জিন যখন ‘হাইয়্যা আলাল ফালাহ’ বলবে তখন দাঁড়াবে। এটা মুজমিরাত (শরহুল কুদুরী) কিতাব থেকে ‘হিন্দিইয়্যাহ’ তথা আলমগীরী কিতাবে বর্ণিত হয়েছে। (শামী, দারুল ফিকর এর ছাপা, ১ম জিলদ, ৪০০ পৃষ্ঠা)


* দেখুন, এখানে ইক্বামতের সময় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করা মাকরূহ বলা হয়েছে। হতে পারে, এই ইক্বামত ইমাম আগমনের আগেই হচ্ছে। সুতরাং এটা মাকরূহ তো হবেই। কেননা ইমামের জন্য দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করা দয়াল নবীজী হুযূর ছাল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার নিষেধ। ইমাম আসলেই সকলে দাঁড়াবেন।


* আলমগীরীর দ্বিতীয় বক্তব্যঃ


٠٢. إنْ كَانَ الْمُؤَذِّنُ غَيْرَ الْإِمَامِ وَكَانَ الْقَوْمُ مَعَ الْإِمَامِ فِي الْمَسْجِدِ فَإِنَّهُ يَقُومُ الْإِمَامُ وَالْقَوْمُ إذَا قَالَ الْمُؤَذِّنُ: حَيَّ عَلَى الْفَلَاحِ عِنْدَ عُلَمَائِنَا الثَّلَاثَةِ وَهُوَ الصَّحِيحُ. (الفتاوى الهندية ، الناشر دار الفكر و ط الكبرى ، ج ١ ص ٥٧ ، الناشر العلمية ج ١ ص ٦٣ – ٦٤)


অনুবাদঃ আর যদি মুয়াযযিন ইমাম ছাড়া অন্য কেউ হন, আর ইমাম ও মুছল্লীগণ মসজিদের ভেতরে থাকেন তাহলে মুয়াযযিনের ‘হাইয়্যা আলাল ফালাহ’ বলার সময় সকলেই দাঁড়াবে। এটি হানাফী মাযহাবের প্রধান তিন ইমামের ক্বওল। আর এটাই ছহিহ। (ফতোয়ায়ে আলমগীরী, দারুল ফিকর এর ছাপা, ১ম জিলদ ৫৭ নং পৃষ্ঠা, দারুল কুতুব আল ইলমিয়্যাহ এর ছাপা, ১ম জিলদ ৬৩ নং পৃষ্ঠা)


* দেখুন এখানে বলা হয়েছে,


০১. ‘ইমাম ও মুছল্লী যদি ভেতরে থাকেন’। কেন থাকবেন ? ইমাম তো নির্ধারিত টাইমে এসে মুছাল্লায় দাঁড়াবেন। আগে এসে মুছল্লীদের সাথে যোগ হওয়া তো সুন্নতের খেলাফ!


০২. ‘এটি হানাফী মাযহাবের প্রধান ৩ ইমামের ক্বওল আর এটাই ছহিহ’। আমরা তো জানি ইমাম আবু ইউসূফ ভিন্নমত পোষণ করেছেন।


যেমনঃ আল্লামা ইমাম বদরুদ্দীন আইনী হানাফী রাহিমাহুল্লাহ (ইন্তেকাল ৮৫৫ হিজরী) বলেছেন,


وَمذهب الشَّافِعِي وَطَائِفَة أَنه يسْتَحبّ أَن لَا يقوم حَتَّى يفرغ الْمُؤَذّن من الْإِقَامَة، وَهُوَ قَول أبي يُوسُف. (عمدة القاري شرح صحيح البخاري ط دار الفكر بيروت ج ٥ ص ١٥٣)


অনুবাদঃ আর ইমাম মুহাম্মদ ইদরীস আশ শাফেয়ী রাহিমাহুল্লাহ কিছু সংখ্যক ইমামের মতে মুস্তাহাব হলো, মুয়াজ্জিন ইকামত শেষ করার পূর্বে না দাঁড়ানো। আর এটা ইমাম আবু ইউসুফ রাহিমাহুল্লাহ’রও অভিমত।(উমদাতুল কারী শরহু ছহিহ আল বুখারী লি বদরুদ্দীন আইনী আল হানাফী, দারুল ফিকর বৈরুতের ছাপা, ৫ম জিলদ ১৫৩ নং পৃষ্ঠা)


* তাহলে আমরা দেখতে পাচ্ছি, আলমগীরী কিতাবের উপরিউক্ত বক্তব্যে পরস্পর বিরুধীতা বিদ্যমান। সুতরাং আমরা অন্য কিতাব দেখবো।


* আসুন দেখা যাক, অন্য নির্ভরযোগ্য কিতাবে কি উল্লেখ আছে,


* এ ব্যাপারে হানাফী মাযহাবের বিশিষ্ট ফক্বীহ ‘শায়খ আল্লামা আহমদ বিন মুহাম্মাদ বিন ঈসমাঈল আত তাহতাবী’ রাহিমাহুল্লাহ (ইন্তেকাল ১২৩১ হিজরী) বলেছেন,


(قوله والقيام لامام ومؤتم الخ) مسارعة لامتثال أمره والظاهر أنه احتراز عن التأخير لا التقديم ، لو قام أول الاقامة لا بأس و حرر. (الحاشية العلامة الطحطاوىّ على الدر المختار شرح تنوير الأبصار ج ١ ص ٢١٥)


অনুবাদঃ (ইমাম এবং মুক্তাদীর দাঁড়ানো) মুয়াযযিনের ‘হাইয়্যা আলাল ফালাহ’ আহ্বানের দ্রুততার সহিত জবাব দেয়া। আর এখানে সুস্পষ্ট কথা হলো, (আহ্বানের জবাব দিতে) দেরী করা থেকে সতর্কতা অবলম্বন করা। সুতরাং কেউ যদি ইক্বামতের শুরুতেই দাঁড়িয়ে যায় তাহলে কোন সমস্যা নেই  বরং আরোও সতর্কতা অবলম্বন করলো। (হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাদ দুররিল মুখতার শরহু তানবীরুল আবছার, ১ম জিলদ ২১৫ পৃষ্ঠা)


* আলমগীরী কিতাবের মুছান্নিফ গণের প্রায় সমসাময়ীক এবং শামী কিতাবের মুছান্নিফের যামানার এমনকি শামীর বয়সে অনেক বড় আল্লামা ইমাম তাহতাবী রাহিমাহুল্লাহ’র উক্ত বক্তব্য বিষয়টি সম্পূর্ণ রূপে পরিস্কার হয়ে গেল, ইক্বামতের শুরুতে দাঁড়ানোতে কোন অসুবিধা নেই।


* এছাড়াও আদ দুররুল মুখতার এবং আর রদ্দুল মুহতার (শামী) কিতাবে নামাযের আদব অনুচ্ছেদে মাসয়ালাটি উল্লেখ করেছেন। আর আল্লামা হাসকাফী রাহিমাহুল্লাহ অনুচ্ছেদের শুরুতেই উছূল বলে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন,


(وَلَهَا آدَابٌ) تَرْكُهُ لَا يُوجِبُ إسَاءَةً وَلَا عِتَابًا كَتَرْكِ سُنَّةِ الزَّوَائِدِ، لَكِنَّ فِعْلَهُ أَفْضَلُ. (الدر المختار ، ط. دار الكتب علمية ، ص ٦٥)


অনুবাদঃ আর নামাযের কিছু আদব আছে। তার তরক কারীকে মন্দ বলা কিংবা ভর্তসনা করা যাবেনা। এটা সুন্নতে যায়েদা তরকের মত। তবে এসব (আদব) করাই ভাল।(আদ দুররুল মুখতার, দারুল কুতুব আল ইলমিইয়্যাহ, ৬৫ নং পৃষ্ঠা)


** তাহলে কেন? কোন দলিলের ভিত্তিতে এটা মাকরূহ হতে যাবে?


* আলমগীরীর তৃতীয় বক্তব্যঃ


٠٣. فَأَمَّا إذَا كَانَ الْإِمَامُ خَارِجَ الْمَسْجِدِ فَإِنْ دَخَلَ الْمَسْجِدَ مِنْ قِبَلِ الصُّفُوفِ فَكُلَّمَا جَاوَزَ صَفًّا قَامَ ذَلِكَ الصَّفُّ وَإِلَيْهِ مَالَ شَمْسُ الْأَئِمَّةِ الْحَلْوَانِيُّ وَالسَّرَخْسِيُّ وَشَيْخُ الْإِسْلَامِ خُوَاهَرْ زَادَهْ وَإِنْ كَانَ الْإِمَامُ دَخَلَ الْمَسْجِدَ مِنْ قُدَّامِهِمْ يَقُومُونَ كَمَا رَأَى الْإِمَامَ. (الفتاوى الهندية ، الناشر دار الفكر و ط الكبرى ، ج ١ ص ٥٧ ، الناشر العلمية ج ١ ص ٦٤)


অনুবাদঃ অতঃপর ইমাম যদি মসজিদের বাহিরে থাকেন এবং মুছল্লীদের কাতারের সামনে দিয়ে প্রবেশ করেন, তখন কাতারের সকলেই দাঁড়িয়ে যাবে। আর এটা শামসুল আইয়িম্মাহ হালওয়ানী, সারাখসী আর শায়খুল ইসলাম খুওয়াহার জাদাহ রাহিমাহুমুল্লাহ এর অভিমত। আর ইমাম যদি সকলের সামনে দিয়ে মসজিদে প্রবেশ করেন তাহলে ইমাম ছাহেবকে দেখামাত্রই সকলেই দাঁড়িয়ে যাবে। (আল ফাতাওয়া আল হিন্দিইয়্যাহ, দারুল ফিকর ও তবআতুল কুবরা ১ম জিলদ ৫৭ নং পৃষ্ঠা, দারুল কুতুব আল ইলমিইয়্যাহ, ১ম জিলদ ৬৪ নং পৃষ্ঠা)


* এটাই সুন্নত তরীকা।


* আলমগীরীর চতুর্থ বক্তব্যঃ 


٠٤. وَإِنْ كَانَ الْمُؤَذِّنُ وَالْإِمَامُ وَاحِدٌ فَإِنْ أَقَامَ فِي الْمَسْجِدِ فَالْقَوْمُ لَا يَقُومُونَ مَا لَمْ يَفْرُغْ مِنْ الْإِقَامَةِ وَإِنْ أَقَامَ خَارِجَ الْمَسْجِدِ فَمَشَايِخُنَا اتَّفَقُوا عَلَى أَنَّهُمْ لَا يَقُومُونَ مَا لَمْ يَدْخُلْ الْإِمَامُ الْمَسْجِدَ وَيُكَبِّرُ الْإِمَامُ قُبَيْلَ قَوْلِهِ قَدْ قَامَتْ الصَّلَاةُ قَالَ الشَّيْخُ الْإِمَامُ شَمْسُ الْأَئِمَّةِ الْحَلْوَانِيُّ: وَهُوَ الصَّحِيحُ. هَكَذَا فِي الْمُحِيطِ. (الفتاوى الهندية ، الناشر دار الفكر و ط الكبرى ، ج ١ ص ٥٧ ، الناشر العلمية ج ١ ص ٦٤)


অনুবাদঃ আর ইমাম মুয়াজ্জিন যদি একই ব্যক্তি হন তাহলে ইক্বামত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কেউই দাঁড়াবেনা। আর মসজিদের বাহিরে যদি ইক্বামত দেয়, তাহলে আমাদের ইমামগণ সকলেই এ ব্যাপারে একমত যে, ইমাম মসজিদে প্রবেশ করার আগ পর্যন্ত কেউই দাঁড়াবেনা। শামসুল আইম্মাহ হালওয়ানী রাহিমাহুল্লাহ বলেন, এটাই ছহিহ। অনুরূপ ‘মুহীতুল বুরহানী ফিল ফিক্বহিন নু’মানী’ কিতাবে আছে।(আল ফাতাওয়া আল হিন্দিইয়্যাহ, দারুল ফিকর ও তবআতুল কুবরা ১ম জিলদ ৫৭ নং পৃষ্ঠা, দারুল কুতুব আল ইলমিইয়্যাহ, ১ম জিলদ ৬৪ নং পৃষ্ঠা)


** ইমাম কখন তাকবীর বলবেন:


প্রায় কিতাবেই মাসআলাটি আছে, মুয়াযযিন যখন ‘ক্বাদ ক্বা-মাতিছ ছালাহ’ বলবে, তখনই ইমাম তাকবীরে তাহরীমা বলবেন, হাত বাঁধবেন (তবে এটা চুড়ান্ত কথা নয়)।


* যেমন ‘কিতাবুল আসারে আছে,


فَإِذَا قَالَ الْمُؤَذِّنُ قَدْ قَامَتِ الصَّلَاةُ، كَبَّرَ الْإِمَامُ. (كتاب الآثار لمحمد بن الحسن الشيباني ، ج ١ ص ١٠٧)


অতঃপর মুয়াযযিন যখন ‘ক্বাদ ক্বা-মাতিছ ছালাহ’ বলবে ইমাম তখন তাকবীর বলবেন।(কিতাবুল আছার লিশ শাইবানী ১ম জিলদ ১০৭ পৃষ্ঠা)


* আলমগীরী কিতাবে আছে,


وَيُكَبِّرُ الْإِمَامُ قُبَيْلَ قَوْلِهِ قَدْ قَامَتْ الصَّلَاةُ قَالَ الشَّيْخُ الْإِمَامُ شَمْسُ الْأَئِمَّةِ الْحَلْوَانِيُّ: وَهُوَ الصَّحِيحُ. هَكَذَا فِي الْمُحِيطِ. (الفتاوى الهندية ، الناشر دار الفكر و ط الكبرى ، ج ١ ص ٥٧ ، الناشر العلمية ج ١ ص ٦٤)


অনুবাদঃ মুয়াজ্জিনের ‘ক্বাদ ক্বা-মাতিছ ছালাহ’ বলার শুরুতেই ইমাম তাকবীর তাহরীমাহ বলবেন। এটা ইমাম শামসুল আইয়িম্মাহ আল হালওয়ানী রাহিমাহুল্লাহ এর অভিমত। আর এটাই ছহিহ। মুহীতুল বুরহানীতে এরূপই রর্ণিত হয়েছে।(ফতোয়ায়ে আলমগীরী, দারুল ফিকর এর ছাপা, ১ম জিলদ ৫৭ নং পৃষ্ঠা, দারুল কুতুব আল ইলমিয়্যাহ এর ছাপা, ১ম জিলদ ৬৪ নং পৃষ্ঠা)


এখন আমাদের প্রশ্ন কেউ যদি এ মাসআলাহটি মানতে চায়, তাহলে ‘হাইয়্যা আলাল ফালাহ’ শুনে দাঁড়িয়ে দু’এক সেকেন্ড পর ‘ক্বাদ ক্বা-মাতিছ ছালাহ’ শুনেই তাকবীর তাহরীমাহ বলবে এটা কঠিন হয়ে যায়না ?

এছাড়া ‘হাইয়্যা আলাল ফালাহ’ শুনে দাঁড়িয়ে ১ম বার ‘ক্বাদ ক্বা-মাতিছ ছালাহ’ শুনেই তাকবীর বললে ইক্বামতের জবাব কখন দেবেন? ইক্বামতের জবাব দেয়া কি মুস্তাহাব নয়??


** ইক্বামতের জবাব দেয়ার হুকুম:


০১. ফতওয়া আলমগীরীতে আছে,


وَإِجَابَةُ الْإِقَامَةِ مُسْتَحَبَّةٌ. هَكَذَا فِي فَتْحِ الْقَدِيرِ وَإِذَا بَلَغَ قَوْلَهُ قَامَتْ الصَّلَاةُ يَقُولُ السَّامِعُ: أَقَامَهَا اللَّهُ وَأَدَامَهَا اللَّهُ مَا دَامَتْ السَّمَوَاتُ وَالْأَرْضُ وَفِي سَائِرِ الْكَلِمَاتِ يُجِيبُ كَمَا يُجِيبُ فِي الْأَذَانِ. كَذَا فِي فَتَاوَى الْغَرَائِبِ وَلَا يَنْبَغِي أَنْ يَتَكَلَّمَ السَّامِعُ فِي خِلَالِ الْأَذَانِ وَالْإِقَامَةِ وَلَا يَشْتَغِلُ بِقِرَاءَةِ الْقُرْآنِ وَلَا بِشَيْءٍ مِنْ الْأَعْمَالِ سِوَى الْإِجَابَةِ. (الفتاوى الهندية ، الناشر دار الفكر و ط الكبرى ، ج ١ ص ٥٧ ، الناشر العلمية ج ١ ص ٦٤)


অনুবাদঃ ইক্বামতের জবাব দেয়া মুস্তাহাব। ফতহুল ক্বাদির কিতাবে এরূপই বর্ণিত হয়েছে। এর মুয়াযযিন যখন ‘ক্বাদ ক্বা-মাতিছ ছালাহ’ বলবে, তখন শ্রুতারা বলবে, أَقَامَهَا اللَّهُ وَأَدَامَهَا اللَّهُ مَا دَامَتْ السَّمَوَاتُ وَالْأَرْضُ ‘আক্বামাহাল্লাহু ওয়া আদামাহা মা দামাতিস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ্ব’। আর বাদ বাকি শব্দগুলোর জবাব আযানের জবাবের মতই দেবে। এটা ফাতাওয়া আল গারাইবে আছে। আর আযান ও ইক্বামতের সময় জবাব দেয়া ছাড়া কথাবার্তা, কুরআন তেলাওয়াত বা যে কোন বিষয়েই জড়িত হওয়া উচিত নয়।(আল ফাতাওয়া আল হিন্দিইয়্যাহ, দারুল ফিকর ও তবআতুল কুবরা ১ম জিলদ ৫৭ নং পৃষ্ঠা, দারুল কুতুব আল ইলমিইয়্যাহ, ১ম জিলদ ৬৪ নং পৃষ্ঠা)


০২. আল বাহরুর রায়েক কিতাবে আছে,


وَفِي فَتْحِ الْقَدِيرِ إنَّ إجَابَةَ الْإِقَامَةِ مُسْتَحَبَّةٌ وَفِي غَيْرِهِ أَنَّهُ يَقُولُ إذَا سَمِعَ قَدْ قَامَتْ الصَّلَاةُ أَقَامَهَا اللَّهُ وَأَدَامَهَا. (البحر الرائق ط. دار الكتاب الاسلامى، ج ١ ص ٢٧٣)


অনুবাদঃ ইক্বামতের জবাব দেয়া মুস্তাহাব। ফতহুল ক্বাদির কিতাবে এরূপই বর্ণিত হয়েছে। এর মুয়াযযিন যখন ‘ক্বাদ ক্বা-মাতিছ ছালাহ’ বলবে, তখন শ্রুতারা বলবে,أَقَامَهَا اللَّهُ وَأَدَامَهَا  ‘আক্বামাহাল্লাহু ওয়া আদামাহা’।(আল বাহরুর রায়েক, দারুল কিতাব আল ইসলামী, ১ম জিলদ, ২৭৩ নং পৃষ্ঠা)


০৩. আল্লামা আলা উদ্দীন হাসকাফী হানাফী রাহিমাহুল্লাহ (ইন্তেকাল ১০৮৮ হিজরী) বলেন,


(وَيُجِيبُ الْإِقَامَةَ) نَدْبًا إجْمَاعًا (كَالْأَذَانِ) وَيَقُولُ عِنْدَ : قَدْ قَامَتْ الصَّلَاةُ : أَقَامَهَا اللَّهُ وَأَدَامَهَا. (الدر المختار ، ط. دار الكتب العلمية ، ص ٥٧)


অনুবাদঃ ইক্বামতের জবাব দেয়া সকলের ঐক্যমতে আযানের মুস্তাহাব। ইক্বামতের জবাব আযানের জবাবের মতই তবে, ‘ক্বাদ ক্বা-মাতিছ ছালাহ’ শুনে এর জবাবে বলবে, ‘আক্বা-মাহাল্লাহু ওয়া আদা-মাহা’। (আদ দুররুল মুখতার, দারুল কুতুব আল ইলমিইয়্যাহ, পৃষ্ঠা নং ৫৭)


০৪. আল্লামা ইমাম আবু যাকারিয়া মুহিউদ্দীন ইয়াহইয়া বিন শরফ আন নববী আশ শাফেয়ী রাহিমাহুল্লাহ (ইন্তেকাল ৬৭৬ হিজরী) বলেন,


وَيُسْتَحَبُّ أَنْ يُتَابِعَهُ فِي أَلْفَاظِ الْإِقَامَةِ إلَّا أَنَّهُ يَقُولُ فِي كَلِمَةِ الْإِقَامَةِ أَقَامَهَا اللَّهُ وَأَدَامَهَا. (المجموع شرح المذهب ط دار الفكر ، ج ٣ ص ١١٧)


অনুবাদঃ আযানের শব্দগুলোর জবাবের মত করেই ইক্বামতের জবাব দেয়া মুস্তাহাব। তবে, ‘ক্বাদ ক্বা-মাতিছ ছালাহ’ শুনে এর জবাবে বলবে, ‘আক্বা-মাহাল্লাহু ওয়া আদা-মাহা’। (আল মাজমূ, দারুল কুতুব আল ইলমিইয়্যাহ, ৩য় জিলদ ১১৭ নং পৃষ্ঠা)


০৫. ইমাম ইবনু কুদামাহ হাম্বলী রাহিমাহুল্লাহ (ইন্তেকাল ৬২০ হিজরী) বলেন,


وَيُسْتَحَبُّ أَنْ يَقُولَ فِي الْإِقَامَةِ مِثْلَ مَا يَقُولُ، وَيَقُولَ عِنْدَ كَلِمَةِ الْإِقَامَةِ : أَقَامَهَا اللَّهُ وَأَدَامَهَا. (المغني لابن قدامة ، مكتبة القاهرة ، ج ١ ص ٣١٠)


অনুবাদঃ আযানের শব্দগুলোর জবাবের মত করেই ইক্বামতের জবাব দেয়া মুস্তাহাব। তবে, ‘ক্বাদ ক্বা-মাতিছ ছালাহ’ শুনে এর জবাবে বলবে, ‘আক্বা-মাহাল্লাহু ওয়া আদা-মাহা’। (আল মুগনী লি ইবনে কুদামাহ, মাক্তাবাতুল কাহেরাহ, ১ম জিলদ ৩১০ নং পৃষ্ঠা)


তাহলে দেখা যায়, এক মুস্তাহাব ধরতে ঐকমত্যের আরেকটি মুস্তাহাব তরক হয়!


এ ছাড়াও আমাদের মাযহাব মতে কাতার সোজা করা সুন্নতে মুআক্কাদাহ।


** সামান্য সময়ে কেমনে কাতার সোজা করা হবে? কাতার সোজা করার কি কোন গুরুত্ব নেই?


০২. কেউ হয়তো বলবেন, আদ দুররুল মুখতার কিতাবে আছে,


(وَشُرُوع الْإِمَام) فِي الصَّلَاة (مُذْ قِيلَ قَدْ قَامَتْ الصَّلَاة) وَلَوْ أَخَّرَ حَتَّى أُتِمَّهَا لَا بَأْسَ بِهِ إجْمَاعًا. (الدر المختار ، ط. دار الكتب علمية ، ص ٦٦)


অনুবাদঃ ইমাম ‘ক্বাদ ক্বা-মাতিছ ছালাহ’ বলার সময় নামায শুরু করবেন। যদি ইক্বামত শেষ হওয়া পর্যন্ত দেরী করে তবে সকলের ঐকমত্যে কোন অসুবিধা নেই। (আদ দুররুল মুখতার, দারুল কুতুব আল ইলমিইয়্যাহ, ৬৬ নং পৃষ্ঠা)


০৩. মেনেই নিলাম কথাটি। কারণ এটাই আমরা আমল করি। অর্থাৎ, ইক্বামত শেষ হলেই তাকবীর বলি। কিন্তু তাতেও তো সময় হয়না। কারণ, ‘হাইয়্যা আলাল ফালাহ’ শুনে দাঁড়ালাম। আবার সবাই একসাথে দাঁড়াতেও পারলামনা। দাঁড়িয়ে কখন কাতার সোজা হবে আর কখনই বা মৌখিক নিয়্যত করা হবে?


০৪. কেউ বলবেন ঐ পুরান কথা যে, প্রথমে দাঁড়িয়ে কাতার সোজা করে বসে যাব। তারপর সময়মত দাঁড়াবো। এ কথাটির জবাব আমরা আগেই দিয়ে এসেছি। এখন কারো কাছে মুস্তানাদ কোন দলিল থাকলে আমাদেরকে বলবেন। ইনশাআল্লাহ আমরা আমল করার চেস্টা করবো।


প্রিয় পাঠক ! শহর বন্দরে মসজিদ গুলো অনেক বড় পরিসরে্র, অনেকগুলো আবার বহুতল বিশিষ্ট। এখন নামাযের কাতার সোজা করতে হলে দুই চার পাঁচ সেকেন্ডে কি সম্ভব? এ ছাড়াও সব মুছল্লী এক সাথে মসজিদে প্রবেশ করেন না। আবার কোন কোন মসজিদে বিভিন্ন এলাকার বিভিন্ন মতাদর্শ বিভিন্ন মাইন্ডের লোক নামায আদায় করেন। সবাইকে নিয়ে ‘হাইয়্যা আলাল ফালাহ’ এর আমল কি আদৌ সম্ভব? আর এটা কেমন তরিক্বা তা তো আমরা পুর্বেই আলোচনা করেছি।


আমার বুঝে আসেনা, আসল সুন্নত (ইমাম টাইম মত মসজিদে এসে না বসেই নামায শুরু করা) রেখে কম গুরুত্বের বিষয়টি নিয়ে কেন এত ঝামেলা হচ্ছে!


আমার কথার অর্থ এই নয় যে, আলেম এবং সমঝদার মানুষের ছোট কোন জামাতে কিংবা বিভিন্ন দরবার, মাদরাসা মসজিদ গুলোতে কেউ এই আমল করতে পারবেনা। বরং এ সকল ক্ষেত্রে ‘হাইয়্যা আলাল ফালাহ’ বললে দাঁড়ানো এবং ‘ক্বাদ ক্বা-মাতিছ ছালাহ’ বললে নামায শুরু করাই ভাল।


** কাতার সোজা করার হুকুম


এ বিষয়ে দয়াল নবীজী হুযূর নবীয়ে করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার নির্দেশনা হলো,


* হাদিস শরীফ নং ০১.


٠١. حَدَّثَنَا أَبُو الوَلِيدِ، قَالَ: حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، عَنْ قَتَادَةَ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : سَوُّوا صُفُوفَكُمْ، فَإِنَّ تَسْوِيَةَ الصُّفُوفِ مِنْ إِقَامَةِ الصَّلاَةِ. (صحيح البخاري رقم ٧٢٣ ، صحيح مسلم ٤٣٣)


অনুবাদঃ হযরত আনাস বিন মালিক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি হযরত নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন, হযরত নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ ফরমায়েছেন, তোমরা তোমাদের (নামাযের) কাতার সমূহ সোজা করে নাও। কেননা নামাযের কাতার সোজা করা নামায প্রতিষ্ঠা করারই নামান্তর। (ছহিহ আল বুখারী, হাদিস শরীফ নং ৭২৩, ছহিহ মুসলিম, হাদিস শরীফ নং ৪৩৩)


* হাদিস শরীফ নং ০২.


٠٢. عَنْ أَبِي مَسْعُودٍ، قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَمْسَحُ مَنَاكِبَنَا فِي الصَّلَاةِ، وَيَقُولُ: اسْتَوُوا، وَلَا تَخْتَلِفُوا، فَتَخْتَلِفَ قُلُوبُكُمْ. (صحيح مسلم ، رقم ٤٣٢)


অনুবাদঃ হযরত আবু মাসউদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, দয়াল নবীজী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাযের সময় আমাদের ঘাড়ে হাত বুলিয়ে বলতেন, তোমরা (তোমাদের নামাযের) কাতার ঠিক করে নাও, এতে বিসৃংখলা সৃষ্টি করোনা। কেননা, (নামাযের কাতারে সৃংখলা বজায় না রাখলে মহান আল্লাহ) তোমাদের অন্তরের মধ্যে বিসৃংখলা সৃষ্টি করে দেবেন। (ছহিহ মুসলিম হাদিস শরীফ নং ৪৩২)


* হাদিস শরীফ নং ০৩.


٠٣. حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا غُنْدَرٌ، عَنْ شُعْبَةَ، ح وَحَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الْمُثَنَّى، وَابْنُ بَشَّارٍ، قَالَا: حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ جَعْفَرٍ، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، عَنْ عَمْرِو بْنِ مُرَّةَ، قَالَ: سَمِعْتُ سَالِمَ بْنَ أَبِي الْجَعْدِ الْغَطَفَانِيَّ، قَالَ: سَمِعْتُ النُّعْمَانَ بْنَ بَشِيرٍ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: لَتُسَوُّنَّ صُفُوفَكُمْ، أَوْ لَيُخَالِفَنَّ اللهُ بَيْنَ وُجُوهِكُمْ. (صحيح البخاري رقم ٧١٧ ، صحيح مسلم ٤٣٦)


অনুবাদঃ হযরত নু’মান বিন বশীর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি শুনেছি, দয়াল নবীজী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা (তোমাদের নামাযের) কাতার ঠিক করে নাও। কেননা, (নামাযের কাতারে সৃংখলা বজায় না রাখলে মহান আল্লাহ) তোমাদের মধ্যে বিসৃংখলা সৃষ্টি করে দেবেন। (ছহিহ আল বুখারী, হাদিস শরীফ নং ৭১৭, ছহিহ মুসলিম, হাদিস শরীফ নং ৪৩৬)


* ইমাম বদরুদ্দীন আইনী রাহিমাহুল্লাহ বলেন,


الْأَمر بتسوية الصُّفُوف، وَهِي من سنة الصَّلَاة عِنْد أبي حنيفَة وَالشَّافِعِيّ وَمَالك، وَزعم ابْن حزم أَنه فرض، لِأَن إِقَامَة الصَّلَاة فرض، وَمَا كَانَ من الْفَرْض فَهُوَ فرض. (عمدة القاري شرح صحيح البخاري ط دار الفكر بيروت ج ٥ ص ٢٥٤)


অনুবাদঃ কাতার সোজা করার হুকুম হলো, ইমাম আবু হানীফা, শাফেয়ী, মালেক রাহিমাহুমুল্লাহ সহ প্রমুখের মতে সুন্নত (মুআক্কাদাহ)। আর ইমাম আবু মুহাম্মদ আলী ইবনে আহমদ ইবনে সাইদ ইবনে হাযম আন্দালুসী রাহিমাহুল্লাহ (ইন্তেকাল ৪৫৬ হিজরী) বলেন, কাতার সোজা করা ফরজ। কেননা, ফরজ পালন করতে যা কিছুরই প্রয়োজন হয়, তাও ফরজ। (উমদাতুল কারী, দারুল ফিকর, ৫ম জিলদ ২৫৪ নং পৃষ্ঠা)


* মাওলানা আব্দুল হাই লৌখনবী রাহিমাহুল্লাহ স্বীয় ‘আত তালিকুল মুমাজ্জাদ’ কিতাবে বলেন,


تسوية الصف، قال ابن حزم بوجوب تسوية الصفوف لقول النبي صلّى الله عليه وسلّم: "لَتُسَوُّنَّ صفوفكم أو ليخالِفَنَّ اللهُ بين وجوهكم"، متفق عليه، لكن ما رواه البخاري: سوُّوا صفوفكم، فإن تسوية الصف من تمام الصلاة يصرفه إلى السّنَّة، وهو مذهب الشافعي وأبي حنيفة ومالك. (التعليق الممجد على موطأ مالك برواية امام محمد ج ١ ص ٣٧٠)


অনুবাদঃ (কাতার সোজা করার অর্থ হলো,) আবু মুহাম্মদ আলী ইবনে আহমদ ইবনে সাইদ ইবনে হাযম আন্দালুসী রাহিমাহুল্লাহ (ইন্তেকাল ৪৫৬ হিজরী) বলেন, কাতার সোজা করা ওয়াজিব। (দলিল হলো,) মুত্তাফাক আলাইহি হাদীস রসূলে পাক ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার বাণী, ‘কাতার ঠিক করে নাও। কেননা, (নামাযের কাতারে সৃংখলা বজায় না রাখলে মহান আল্লাহ) তোমাদের মধ্যে বিসৃংখলা সৃষ্টি করে দেবেন’। কিন্তু ইমাম বুখারী রাহিমাহুল্লাহ’র বর্ণনা ‘কাতার ঠিক করে নাও, কেননা কাতার ঠিক করাই নামযের পূর্ণতা স্বরূপ’। এ বর্ণনার ভিত্তিতে কাতার সোজা করা সুন্নতে মুআক্কাদাহ প্রতিয়মান হয়। আর এটা ইমাম শাফেয়ী ও ইমাম আবু হানীফার (রাহিমাহুল্লাহ) মাযহাব।(আত তা’লিকুল মুমাজ্জাদ আলা মুয়াত্তা মালিক বি রেওয়াতে ইমাম মুহাম্মাদ, দারুস সুন্নাহ, ১ম জিলদ ৩৭০ পৃষ্ঠা)


* মোদ্দা কথা হলো, আমাদের হানাফী মাযহাবে কাতার সোজা করা ‘সুন্নতে মুআক্কাদাহ’। তরক কারী অবশ্যই গুনাহগার হবে।


সুতরাং আমরা দয়াল নবীজী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার সুন্নত ‘ইমাম নির্ধারীত সময়ে এসে নামায শুরু করা’ মেনে নিয়ে ইমাম সাহেবকে দেখেই দাঁড়িয়ে কাতার সোজা করে নিলে দাঁড়ানোর সুন্নত এবং কাতার সোজা করার সুন্নতে মুআক্কাদাহ এক সাথে পালন করতে সক্ষম হবো।


* এছাড়াও পূর্বে উল্লেখিত একটি বিষয় মৌখিক নিয়ত করা। আমাদের এই উপমাহাদেশে খুব গুরুত্ব সহাকারে এটি মানা হয়। অনেকে তো আরবীতে নাওয়াইতু বলতে পারেনা এইজন্য নামাযই পড়েনা!


আর অনেকে বিষয়টি স্বীকারও করবেন যে, এই নাওয়াইতুর জন্য অনেক ইমাম সাহেবের ইমামতীও যায়! কেননা, জানাযার নামায কিংবা ঈদের নামাযে এসেই হাঁক ছাড়ে, ‘ইমাম ছাব! নিয়ত বলে দেন’। ইমাম সাহেব বিরক্ত বোধ করলেই কাম ১২ টা বেজে যায়।


সুতরাং গুরুত্ব কতটুকু আছে তা বিবেচনা না করে এখানে বলতে হয় যে, কেউ যদি মৌখিক ভাবে(আওয়াজ ছাড়া) নিয়্যত করতেই চায় তাহলে ‘হাইয়্যা আলাল ফালাহ’ শুনে দাঁড়িয়ে মৌখিক নিয়্যত করে কেমনে ইমামের সাথে তাকবীরে তাহরীমাহ বলে?


** মৌখিক নিয়্যতের গুরুত্ব:


০১. আল্লামা ইবনে নুজাইম হানাফী রাহিমাহুল্লাহ (ইন্তেকাল ৯৭০ হিজরী) বলেন,


وقد اختلف كلام المشايخ في التلفظ باللسان فذكر في منية المصلي أنه مستحب وهو المختار وصححه في المجتبى. وفي الهداية والكافي والتبيين أنه يحسن لاجتماع عزيمته. (البحر الرائق شرح كنز الدقائق ، ط. دار الكتب العلمية ، ج ١ ص ٤٨٣)


অনুবাদঃ মৌখিক নিয়্যতের হুকুম নিয়ে মাশায়েখগণ ইখতেলাফ করেছেন। হানাফী মাযহাবের মজবুত কিতাব ‘মুনিয়্যাতুল মুছল্লী’ তে আছে, নিশ্চয়ই তা মুস্তাহাব। আর এটাই ছহিহ অভিমত যা কুদুরী কিতাবের শরাহ ‘আল মুজতাবা’ গ্রন্থকার আবুর রেজা নজমুদ্দীন মুখতার ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে মাহমুদ আয যাহেদী রাহিমাহুল্লাহ (ইন্তেকাল ৬৫৮ হিজরী) ছহিহ বলেছেন। আর আল হিদায়া, আল কাফী এবং আত তাবঈনুল হাকায়েক কিতাবে ইজমায়ে আজীমতের ভিত্তিতে মৌখিক নিয়ত উত্তম বলে উল্লেখ আছে।(আল বাহরুর রায়েক, দারুল কুতুব, ১ম জিলদ ৪৮৩ নং পৃষ্ঠা)


০২. ‘আল ফিক্বহু আলাল মাযাহিবিল আরবাআহ’ কিতাবে আছে,


المالكية قالوا : إن التلفظ بالنية خلاف الأولى لغير الموسوس، ويندب للموسوس. (الفقه على المذاهب الاربعة ، دار الكتب العلمية ، ج ١ ص ١٩٥)


অনুবাদঃ মালেকী মাযহাবের চুড়ান্ত কথা হলো, সন্দেহযুক্ত লোক ছাড়া অন্যদের জন্য মৌখিক নিয়্যত উত্তম নয়। আর সন্দেহযুক্ত লোকের জন্য মৌখিক নিয়্যত মুস্তাহাব। (আল ফিক্বহু আলাল মাযাহিবিল আরবাআহ, দারুল কুতুব, ১ম জিলদ ১৯৫ নং পৃষ্ঠা)


০৩. ইমাম নববী রাহিমাহুল্লাহ (ইন্তেকাল ৬৭৬ হিজরী) বলেন,


وَالنِّيَّةُ بِالْقَلْبِ وَيُنْدَبُ النُّطْقُ قُبَيْلَ التَّكْبِيرِ. (منهاج الطالبين وعمدة المفتين في الفقه ، ط. دار الفكر ، ج ١ ص ٢٥)

অনুবাদঃ আর নিয়্যত হলো অন্তরের। আর তাকবীর তাহরীমাহ’র পূর্বক্ষনে মৌখিক নিয়্যত ভাবে নিয়্যত করা মুস্তাহাব। (মিনহাজুত তালেবীন লি ইমাম নববী, দারুল ফিকর, ১ম জিলদ ২৫ পৃষ্ঠা)


সুতরাং মৌখিক নিয়্যত করতে হলে অবশ্যই ইমাম সাহেবকে দেখে দাঁড়িয়ে কাতার সোজা করতে করতেই তা আদায় করে নিতে হবে।


** আমরা এই দীর্ঘ্য আলোচনা থেকে চুড়ান্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হলাম,


০১. ইমাম নিজ হুজরায় সুন্নত পড়ে নির্ধারিত টাইমে মসজিদে প্রবেশ করে নিজ স্থানে দাঁড়াবেন। এটাই নবীজী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার খাছ সুন্নত। ইচ্ছা করে তরক করা বেআদবী।

০২. মুয়াযযিন ইমামকে দেখেই ইক্বামত শুরু করবে।

০৩. ইমাম কাতার সোজা হচ্ছে কি না খেয়াল করবেন। প্রয়োজনে কাতার সোজা করার জন্য সমজদার কয়েকজনকে দায়ীত্ব দেবেন। তারা কাতার সোজা হয়েছে বল্লেই নামায শুরু করবেন।

০৪. ইক্বামত শেষ হলেই ইমাম তাকবীর তাহরীমাহ বলবেন।

০৫. ইমাম কোন কারণে মসজিদে অবস্থান করলে যদি দেখেন ছোট জামাত আর সবাই সমজদার তাহলে তিনি ‘হাইয়্যা আলাল ফালাহ’ এর আমল করতে পারেন, এটা তার ইচ্ছা।

০৬. ‘হাইয়্যা আলাছ ছালাহ’ কিংবা ‘হাইয়্যা আলাল ফালাহ’ এর আগে দাঁড়িয়ে যাওয়া মাকরূহ তাহরীমী হওয়া তো দূরের কথা, মাকরূহ তানযীহীও নয়। সোজা কথায় মাকরূহ নয়।

০৭. প্রথমে কাতার সোজা করে বসে তারপর ‘হাইয়্যা আলাল ফালাহ’ বলার সময় দাঁড়ানো এটার কোন প্রমান নেই। এটা বিদআত।

০৮. কাতার সোজা করা অধিকাংশের মতে ওয়াজিব। আর হানাফী মাযহাব মতে সুন্নতে মুআক্কাদাহ।

০৯. ইক্বামতের জবাব দেয়া মুস্তাহাব।

১০. মৌখিক নিয়্যত করা ভাল।


১১. এ বিষয়টি ইস্তেহসানের দৃষ্টিতে দেখে যে এলাকায় যা আমল হচ্ছে তার উপরই আমল করবেন। এতে কোন বাড়াবাড়ীর সুযোগ নেই।

মহান আল্লাহ পাক আমাদেরকে ছহিহ আমল করার তৌফিক দিন। আর ফিতনা ছড়ানো থেকে হিফাজত করুন। আমিন!


No comments: