মাযহাব
মাযহাব একটি আরবী শব্দ । এর অর্থ- মত, মতবাদ, আদর্শ, চলার পথ ইত্যাদি । [1] তাছাড়া বিভিন্ন অভিধানে মাজহাবের বেশ কিছু শাব্দিক অর্থ বর্ননা করা হয়েছে । যেমন-
- ক) নির্দিষ্ট পথ, যার ওপর চলা হয় [2]
- খ) নির্দিষ্ট মতাদর্শ যার উপর চলা হয় [3]
- গ) পথ বা রাস্তা [3]
- ঘ) মূল । যেমন লিহয়ানী কাসায়ী থেকে বর্ননা করেছেন -মা ইউদরা আঈনা মাযহাব - অর্থঃ তাঁর মূল কোথায়, তা জানা যায় না ।[3]
পারিভাষিক বিশ্লেষণ
পরিভাষায় মাযহাব হলো মুজতাহিদ ইমাম কর্তৃক কুরআন-সুন্নাহ’র পরোক্ষ, সুস্পষ্ট, অস্পষ্ট ও পরস্পর বিরোধপূর্ন জটিল বিষয়ের ব্যাখ্যা প্রদান করা এবং নির্দিষ্ট কিছু নীতিমালার ওপর ভিত্তি করে কুরআন-হাদিসের আলোকে নব উদ্ভূত সমস্যার প্রদত্ত সমাধান । এ প্রসঙ্গে মু’জামুল ওয়াসীত প্রণেতা বলেন,
মাযহাব হলো- কিছু নির্দিষ্ট মতামত ও জ্ঞানগত দৃষ্টিকোণ ও দর্শন, যা পরস্পর একে অপরের সাথে মিলে মিশে একটি সুবিন্যস্ত মতাদর্শে পরিণত হয় ।[4]
- সহজ কথায়- মুজতাহিদ ইমাম কর্তৃক প্রদত্ত কুরআন-হাদিসের গবেষণালব্ধ ব্যাখ্যাকে মাযহাব বলে ।
- তাকলীদের পিরিচয়ঃ
শাব্দিক বিশ্লেষণ
তাকলীদ শব্দটিও আরবী । অভিধানে এর অর্থ হলো- অনুসরণ করা, নকল করা, অনুকরণ করা, বেড়ী লাগানো, গলায় তরবারি ঝুলানো, কুরবানির জন্তুর গলায় মালা পড়ানো, হার পড়ানো ইত্যাদি ।
ফিকাহ্ বিশ্বকোষে তাকলীদের চারটি পরিভাষায় তাকলীদ শব্দ ব্যবহারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে,
- ক) অভিভাবক বা বিচারক এর তাকলীদ । অর্থাৎ কাজে ও কর্মে তাঁদের অভিভাকত্ব গ্রহণ করা ।
- খ) হাদী বা কুরবানির পশুর তাকলীদ অর্থাৎ হাদীর গলায় কিছু বেঁধে দেওয়া যাতে করে বুঝা যায় যে, তা কুরবানির পশু
- গ) তাবীজ তাকলীদ করা বা তাবীজ কবজ বাঁধা
- ঘ) দ্বীনের ক্ষেত্রে তাকলীদ করা অর্থাৎ দলীল প্রমাণ না জেনে দ্বীনের কোন ব্যাপারে অন্যের কথা গ্রহণ করা । [5]
পারিভাষিক বিশ্লেষণ
- ক) আল্লামা শামসুদ্দিন কুরতুবী (ওফাত ৬৭১ হি)
উলামায়ে কিরামের নিকট তাকলীদ এর অর্থ হলো- কোন দলিল প্রমাণ ব্যতিরেকে কোন কথাকে গ্রহণ করে নেয়া । আর এ কথার উপর ভিত্তি করে বলা যায়- যে ব্যক্তি নবী করিম (সঃ) এর কথাকে তাঁর মু’জিযার ক্ষেত্রে কোনো যুক্তি-তর্ক ছাড়াই গ্রহণ করবে, সে মুকাল্লিদ বলে গণ্য হবে । আর যে এক্ষেত্রে সামান্য চিন্তা-ভাবনার আশ্রয় নিবে সে মুকাল্লিদ গণ্য হবে না । (কুরতূবী, আবূ আব্দিল্লাহ মুহাম্মাদ ইবনি আহমাদ (৬৭১ হিঃ), তাফসীরুল কুরতুবী [6]
- খ) আল্লামা ইসমাইল হাক্কী (রহঃ) এর তাক্বলীদের সংজ্ঞায় বলেন
তাকলীদ মানে মানুষের জন্য অন্য কাউকে, তিনি যা বলেন বা করেন সঠিক হওয়ার ধারনা নিয়ে কোনরূপ দলিলের অপেক্ষা না করে তাঁকে অনুসরণ করা । যেমন বলা যেতে পারে, এই অনুসরণকারী ব্যক্তি অন্যের কথা ও কাজকে দলিল-প্রমাণ ব্যতীত নিজের গলার হার স্বরূপ নেনে নিয়েছে ।[7]
- গ) আল্লামা ইবনে মালিক মিসরী (রহঃ) বলেন
অন্যের কথা বা কাজকে সঠিক বা সত্য জেনে, বিশ্বাস করে দলীলের চিন্তা ব্যতিরেকে অনুসরণ করে যাওয়াকে তাক্বলীদ বলে । [8]
মূলতঃ তাক্বলীদ দু’প্রকারঃ
- এক) তাক্বলীদ মুতলাক বা একই সময়ে অনেক মুজতাহিদ ইমামের অনুসরণ
- দুই) তাক্বলীদে শাখসী বা নির্ধারিত একজন মুজতাহিদকে মান্য করা
[9]
তথ্যসূত্রঃ
- ↑ ডঃ মুহাম্মাদ ফজলুর রহমান, আল মু’জামুল ওয়াফী, প্রথম প্রকাশ (রিয়াদ প্রকাশনী, বাংলাবাজার, ঢাকা), ২০০৫, পৃঃ ২৭৩)
- ↑ ইব্রাহীম মোস্তফা ও সাথীগণ আল মু’জামুল ওয়াসীত, দারুদ দাওয়াহ্, খন্ড ১, পৃঃ ৩১৭
- ↑ 3.0 3.1 3.2 আল মু’জামুল ওয়াসীত, খন্ড ১, পৃঃ ৩১৭; তাজুল আরুছ খন্ড ২, পৃঃ ৪৫০
- ↑ আল মু’আজামুল ওয়াসীত, খন্ড ১, পৃঃ ৩১৭
- ↑ আল মু’জামুল ওয়াফী, প্রাগুক্ত, পৃঃ ২৫৬
- ↑ দারুল কুতুবিল মিসরিয়্যাহ্, কায়রো, দ্বিতীয় প্রকাশ - ১৯৬৪ ঈসায়ী), খন্ড ২ পৃঃ ২২১
- ↑ ইসমাইল হাক্কী, ইসমাইল মুস্তাফা আল ইস্তাম্বুলী আল হানাফী, তাফসীরে রুহুল বয়ান (দারুণ নশর), খ ১০, পৃঃ ৪২৬
- ↑ শরহুল মানার, পৃঃ ২৫২
- ↑ কোরআন ও হাদিসের কষ্টিপাথরে মাজহাব (লেখকঃ মুফতি মাওলানা মুহাম্মাদ ওসমান গনি সালেহী
No comments:
Post a Comment