শবে বরাতের রাতে আমাদের করণীয় ও বর্জনীয়ঃ

লাইলাতুন নিফসি মিন শাবান বা শবেবরাতের রাতকে কেন্দ্র করে আমাদের দেশে অনেক অনৈসলামিক কার্যকলাপ প্রচলিত রয়েছে আতশবাজি কিংবা ধরণের কোন কাজ ইসলাম সমর্থন করে না শবেবরাত বা অন্য কোন উপলক্ষকে কেন্দ্র করে গুলো করা কোন ক্রমেই বৈধ নয় স্থানিয় সংস্কৃতি গ্রহন বর্জনে ইসলামে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা রয়েছে সর্বাবস্থায় সে নীতিমালা অনুসরণ করতে হবে নিজেদের মনগড়া কিছু করতে গেলেই সমূহ বিপদের সম্ভাবনা থাকে

সহীহ হাদীস এবং সাহাবী তাবিঈগণের কাজ দ্বারা শবেবরাতের ফযীলত প্রমাণিত কিন্তু দেশীয় সংস্কৃতির প্রভাবে শবেবরাত কেন্দ্রিক বহু অনৈসলামিক কার্যকলাপ প্রচলিত রয়েছে এগুলোকে অবশ্যই পরিহার করতে হবে তবে এই অনৈসলামিক কার্যাদি থেকে বেঁচে থাকার অজুহাতে শবেবরাতের ফযীলত অস্বীকারের সুযোগ নেই হাতের আঙ্গুলে পঁচন রোগ দেখা দিলে আঙ্গুল কাটতে হবে; কেউ মাথা কাটার পরামর্শ দিলে তা মানার সুযোগ নেই

রাতে করণীয়:

হাফিয ইবনে তাইমিয়্যা হাম্বালী' (ওফাত: ৭৯৫ হিজরী) বলেন-

শবে বরাত বিষয় কথা হল, রাতের ফযিলত সম্পর্কে অনেক হাদীস এবং আছার (সাহাবী তাবেঈগণের অভিমত) বর্ণিত রয়েছে সলফে সালিহীন থেকে উদ্ধৃত রয়েছে যে, তাঁরা রাতে নফল নামায পড়তেন রাতের নফল নামায একা একা পড়তে হবে সলফে সালিহীন সে রকমই করতেন আর এটাই (পরবর্তীদের জন্য) হুজ্জাত বা গ্রহণযোগ্য দলীল সুতরাং এটাকে অস্বীকার করা যাবে না 

(মাজমুআ'য়ে ফাতাওয়া, ২৩ : ১৩২)

ইমাম ইবনু রাজাব হাম্বালী ( ওফাত: ৭৯৫ হিজরী) বলেন-فينبغي للمؤمن ان يتفرغ في تلك الليلة لذكر الله تعالي وادعاءه بغفران الذنوب وستر العيوب وتفريج الكروب وان يقدم على التوبة فان الله يتوب فيها من يتوب.

একজন মুমিনের উচিত রাতে যেনো আল্লাহর যিকির করে ছাড়া গোনাহ সমূহ ক্ষমা করা, ক্রটি সমূহ ঢেকে রাখা, এবং মুসিবত সমূহ দূর করার জন্য তাঁর দরবারে দোয়া করে রাতের প্রথম কাজ হলো তাওবা করে নেয়া কেননা রাতে যারা তাওবা করে আল্লাহ তাদের তাওবা কবুল করেন

(সূত্র: লাতায়িফুল মা'রিফ, পৃষ্ঠা ১৯৬)

ইমাম ইবনু রাজাব হাম্বালী ( ওফাত: ৭৯৫ হিজরী) বলেন- وليلة النصف من شعبان كان التابعون من أهل الشام كخالد بن معدان ومكحول ولقمان بن عامر يعظمونها ويجتهدون فيها في العبدات

শামের অধিবাসি তাবিঈগণ যথা খালিদ বিন মা'দান, মাকহুল, লুকমান বিন আমির প্রমূখ শবেবরাতকে খুবই তাযীম করতেন এবং সারা রাত  নফল ইবাদতে মশগুল থাকতেন 

(সূত্র: লাতায়িফুল মা'রিফ,পৃ:১৯০)

কথা হলো, এই যে তাবিঈগণ শবেবরাতে সারা রাত ইবাদত করতেন তা জেগে থেকে করতেন নাকি ঘুমিয়ে করতেনবাকী থাকলো সমবেত ভাবে মসজিদে অবস্থান প্রসঙ্গ  

ইমাম ইবনু রাজাব হাম্বালী বলেন- كان خالد بن معدان ولقمان بن عامر وغيرهما يلبسون فيها أحسن ثيابهم ويتبخرون ويكتحلون ويقومون في المساجد ليلتهم تلك

খালিদ বিন মা'দান, লুকমান বিন আমির এবং অন্যান্য তাবিঈগণ শবেবরাতে সুন্দর জামা কাপড় পরতেন, সুগন্ধি জ্বালাতেন এবং চোখে সুরমা লাগিয়ে সারা রাত মসজিদে অবস্থান করতেন (সূত্র: লাতায়িফুল মা'রিফ, পৃ:১৯০)

ইমাম বুখারী রাহমাতুল্লাহি আলাইহির উস্তাদ ইমাম ইসহাক বিন রাহওয়িয়া রাহমাতুল্লাহি আলাইহি ( ওফাত: ২৩৮ হিজরী ) বলেন- في قيامها في المساجد جماعة ليس ببدعة

শবেবরাতে সম্মিলিত ভাবে মসজিদে অবস্থান করা বিদআত নয়

(সূত্র: লাতায়িফুল মা'রিফ, পৃ: ১৯০)

একনজরে "শবে বরাতে আমাদের করণীয় বর্জনীয় কাজসমুহ

শবে বরাতে আমাদের করণীয়ঃ

) ইবাদাত বন্দেগীর জন্যে শবে বরাতের রাতে জাগ্রত থাকা মুস্তাহাব জাগ্রত থাকার অর্থ হলো কুর'আন তিলাওয়াত করা বা শুনা, হাদীস শরীফ পড়া বা শুনা তাসবীহ-তাহলীল করা, দুরূদ শরীফ পড়া

) কবর যিয়ারত করা এবং মৃত আত্মীয়- স্বজন মুসলমানদের জন্যে মাগফিরাত কামনা করা হাদীস শরিফে আছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম শবে বরাতের রাতে মুমিন নারী-পুরুষের কবর যিয়ারতের জন্যে কবরস্থানে যেতেন

) আল্লাহর দরবারে দু' করা হাদীস শরীফে এসেছে শবে বরাতের রাতে মহান আল্লাহ মুশরিক এবং হিংসুক ব্যাতিত সবাইকে ক্ষমা করে দেন

) নফল নামায পড়া রাতে বেশি বেশি নফল নামায পরা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম রাতে দীর্ঘ সিজদাহসহ নামায আদায় করতেন

) ১৫ শাবান দিনে রোযা রাখা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম ইরশাদ করেন শাবানের রাতে তোমরা নামায পর আর দিনে রোযা রাখ

শবে বরাতে বর্জনীয় কাজসমুহঃ

ঘর-বাড়িদোকানমসজিদরাস্তা-ঘাট আলোকসজ্জা করা

) বিনা প্রয়োজনে মোমবাতি বা প্রদীপ জ্বালানো

) আতশবাজি করা

) পতকা ফোতানো

) মাযার, কবরস্তানে মেলা বসানো

(সূত্রঃ শবে বরাত, মাওলানা নজমুল হুদা খান)

 মনে রাখতে হবে, এরাতে মসজিদে সমবেত হওয়া যেনাে কোনক্রমেই বাধ্যতামূলক মনে করা না হয় আর যারা এরাতে নফল বন্দেগীর জন্য স্বেচ্ছায় মসজিদে আসেনা তাদের যেনাে গালমন্দ করা না হয়

এবার আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, আমরা তাবিঈগণের দেখানো পথ অনুসরণ করবো নাকি বর্তমান যুগের কোন মোল্লা মৌলভীর পথ ?

পোস্টঃ আহসান হাবীব শাহ 

Post a Comment

Please Select Embedded Mode To Show The Comment System.*

Previous Post Next Post

Featured post