শবে বরাত নিয়ে কিছু সংশয় নিরসন

শবেবরাত সম্পর্কে লা-মাযহাবী, আহলে হাদীস, সালাফিদের ইমাম 'হাফিয ইবনে তাইমিয়্যা হাম্বালী' (ওফাত: ৭৯৫ হিজরী) 'শায়খ নাসীরুদ্দীন আলবানী' (ওফাত: ১৪২০ হিজরী) এর অভিমতঃ

'হাফিয ইবনে তাইমিয়্যা হাম্বালী' (ওফাত: ৭৯৫ হিজরী) এর অভিমতঃ

হাফিয ইবনে তাইমিয়্যা সকল প্রকার বিদআত নিন্দনীয় কাজের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের কারনে খ্যাত হয়ে আছেন পরবর্তী যুগের মুহাক্কিক উলামায়ে কেরাম বলেছেন, ইবনে তাইমিয়্যা কঠোরতা করতে গিয়ে কোন কোন ক্ষেত্রে সীমালঙ্ঘন পর্যন্ত করেছেন এমনকি তিনি অনেক মাসআলায় ইজমায়ে উম্মতের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন তিনি যদিও হাম্বালী মাযহাবের অনুসারী ছিলেন, কিন্তু বিভিন্ন মাসআলায় কঠোর অবস্থানের কারনে গাইরে মুকাল্লিদগণও (মাযহাব অমান্যকারী) তাঁকে ইমাম হিসেবে স্বীকৃতি দেন এমনকি তাঁকে যুগের মুজাদ্দিদ হিসেবে চিহ্নিত করেন সেই হাফিয ইবনে তাইমিয়্যা শবে বরাত সম্পর্কে বলেন-

শবে বরাত বিষয় কথা হল, রাতের ফযিলত সম্পর্কে অনেক হাদীস এবং আছার (সাহাবী তাবেঈগণের অভিমত) বর্ণিত রয়েছে সলফে সালিহীন থেকে উদ্ধৃত রয়েছে যে, তাঁরা রাতে নফল নামায পড়তেন রাতের নফল নামায একা একা পড়তে হবে সলফে সালিহীন সে রকমই করতেন আর এটাই (পরবর্তীদের জন্য) হুজ্জাত বা গ্রহণযোগ্য দলীল সুতরাং এটাকে অস্বীকার করা যাবে না

(মাজমুআ'য়ে ফাতাওয়া, ২৩ : ১৩২)

বিষয় তিনি অন্যত্র বলেছেন-

অধ্যায়ের মধ্যে রয়েছে- শবে বরাত শবে বরাতের ফযিলত বিষয় অনেক মারফু হাদীস এবং আছার (সাহাবী তাবেঈগণের অভিমত) বর্ণিত রয়েছে যেগুলো প্রমাণ করে যে, এটা একটি মর্যাদাবান রাত সলফে সালিহীন রাতকে নফল নামাযের জন্য নির্দিষ্ট করে রাখতেন আর শা'বান মাসের রোযার ফযিলত বিষয়ে সহীহ হাদীস রয়েছে মদীনা শরীফের বাসিন্দা পূর্ববর্তী কোনো কোনো আলিম এবং পরবর্তী যুগের কেউ কেউ রাতের ফযিলতকে অস্বীকার করেছেন তাঁরা বিষয় বর্ণিত হাদীসের (সনদ ব্যাপারে) সমালোচনা করেছেন যেমন একটি হাদীস- ' রাতে আল্লাহ পাক বনু কালব গোত্রের সকল বকরীর সমুদয় পশমের চেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষকে ক্ষমা করে দেন' তাঁরা বলেন, হাদীসের সনদ এবং বিষয়ের অন্যান্য হাদীসের সনদে কোনো পার্থক্য নেই

কিন্তু বিপুল সংখ্যক আহলে ইলম বরং আমাদের (হাম্বালীগণের) অধিকাংশ এবং অন্যান্যরা (অন্য মাযহাবের উলামা) রাতের ফযিলত স্বীকার করেন আর এর উপর ইমাম আহমদ বিন হাম্বাল এর অভিমত প্রমাণ হিসেবে রয়েছে কেননা বিষয় বহু সংখ্যক হাদীস বর্ণিত হয়েছে সলফে সালিহীনের অভিমতও এর পক্ষে রয়েছে রাতের কোনো কোনো ফযিলতের কথা 'মুসনাদ' এবং 'সুনান' (হাদীসের কিতাবের দু'টি প্রকার) সমূহে উল্লেখ রয়েছে যদিওবা বিষয়ে কিছু মনগড়া কথাও প্রচলিত রয়েছে

(ইকাতিদাউ সিরাতুম মুসতাকিম, পৃষ্ঠা ৩০১)

'শায়খ নাসীরুদ্দীন আলবানী' (ওফাত: ১৪২০ হিজরী) এর অভিমতঃ

নিকট অতীতকালে সালাফি নামদারী মাযহাব অমান্যকারী আলিমগণের মধ্যে একজন প্রসিদ্ধ ব্যক্তি হচ্ছেন শায়খ নাসীরুদ্দীন আলবানী আলবেনীয় বংশদ্ভূত সিরীয় আলিম মধ্যে যৌবনে সিরিয়া থেকে সৌদি আরব পাড়ি জমান কালক্রমে তিনি সৌদি আরবে একজন খ্যাতিমান আলিম হিসেবে প্রতিষ্ঠা পান তাঁর লিখিত সম্পাদিত কিতাবাদীর সংখ্যা প্রায় দুই' সালাফীগণের কাছে তিনি হাদীস বর্ণনাকারীগণের সবলতা দুর্বলতা বাছ-বিছারে একজন শ্রেষ্ঠ পণ্ডিত

আমরা পূর্বে উল্লেখ করে এসেছি যে, শায়খ আলবানীর খড়গ থেকে ইমাম বুখারী (রহঃ) পর্যন্ত রক্ষা পাননি কেননা শায়খ আলবানী ইমাম বুখারীর 'আদাবুল মুফরাদ' নামক বিখ্যাত হাদীসের কিতাবকে সাহীহ আদাবুল মুফরাদ এবং দাঈফ আদাবুল মুফরাদ নামে দ্বিখণ্ডিত করে পৃথক দু'টি কিতাব করেছেন অনুরুপ তিনি হাদীসের বিখ্যাত কিতাবগুলোকে সাহীহ দাঈফ নামে দ্বিখণ্ডিত করেছেন যেমন, সাহীহ আবু দাউদ, দাঈফ আবু দাউদ, সাহীহ তিরমিযি, দাঈফ তিরমিযি, সাহীহ নাসাঈ, দাঈফ নাসাঈ, সাহীহ ইবনু মাজাহ, দাঈফ ইবনু মাজাহ, সাহীহ আততারগীব ওয়াত তারহীব, দাঈফ আততারগীব ওয়াত তারহীব এবং সাহীহ জামীউস সাগীর, দাঈফ জামীউস সাগীর

'সিলসিলাতুল আহাদিসিস সাহীহা ওয়া শাইয়ূম মিন ফিকহিহা' নামে শায়খ আলবানী সংকলিত (এগারো খন্ডে সমাপ্ত) একটি হাদীসের কিতাব রয়েছে কিতাবখানি সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদের 'মাকতাবুল মাআরিফ' থেকে ১৪১৫ হিজরি সালে প্রকাশিত হয়েছে কিতাবের ৩য় খন্ডের ১৩৫ নং পৃষ্ঠায় শায়খ আলবানী একটি শিরোনাম করেছেন 'শবেবরাত বিষয়ে যা সাহীহ

এই শিরোনামের অধীনে হাদীস পেশ করেছেন-

এই হাদীস উল্লেখের পর শায়খ আলবানী বলেন-

হাদীআল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলা শাবানের মধ্যবর্তী রাতে (শবেবরাতে) তাঁর সৃষ্টিকুলের প্রতি (রাহমাতের দৃষ্টিতে তাকান) তাঁর সৃষ্টিকুলের প্রতি হিংসা পোষণকারী ছাড়া বাকী সবাইকে ক্ষমা করে দেন।সটি সাহীহ সাহাবগণের একটি জামাআত থেকে বিভিন্ন সনদসূত্রে হাদীস বর্ণিত হয়েছে তাঁরা হলেন, মু'আয বিন জাবাল, আবু ছা'লাবা আল খুশানী, আব্দুল্লাহ বিন আমর, আবু মূসা আশ'আরী, আবু হুরাইরা, আবু বাকর সিদ্দিক, আউফ বিন মালিক এবং আইশা (রাদিয়াল্লাহু আনহুম)

(সিলসিলাতুল আহাদিসিস সাহীহা :১৩৫)

এরপর শায়খ আলবানী প্রত্যেক হাদীসের সনদসূত্র কিতাবাদীর রেফারেন্সসহ বিস্তারিত আলোচনা করে বলেন-

সারকথা হলো- হাদীসটি এই সমষ্টিক সনদসূত্রে নিঃসন্দেহ সাহীহ

(সিলসিলাতুল আহাদিসিস সাহীহা : ১৩৮)

পাঠকের খিদমতে আরয, আমরা এতক্ষণে সালাফী কিংবা আহলে হাদীস নামধারী মাযহাব অমান্যকারীদের দুইজন প্রখ্যাত ইমামের অভিমত পাঠ করলাম সবাই শবেবরাতের ফযীলতকে স্বীকার করে নিয়েছেন এর পরও কোন আলীম কিংবা শায়খ উপাধিধারী ব্যক্তি শবেবরাতের ফযীলতকে অস্বীকার করেন, তবে তার জন্য হিদায়াতের দোয়া ছাড়া আমাদের আর কী করার আছে ?

সুত্রঃ মাওলানা মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল হেলাল সাহেবের রচিত ''কুরআন হাদীসের আলোকে শবেবরাত'' কিতাব থেকে সংগৃহীত

কিছু নামধারী আলেম শবে বরাত সম্পর্কিত কিছু হাদীসকে দ্বয়ীফ বলে শবে বরাতকে বিদায়ত বলে থাকেন

দ্বয়ীফ হাদীছের ব্যাপারে নিচে আলোচনা করা হলঃ

দ্বয়ীফ হাদীছঃ

যে হাদীছের রাবী হাসান হাদীছের রাবীর গুণ সম্পন্ন নন তাকে দ্বয়ীফ হাদীস বলা হয় হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন কথাই দ্বয়ীফ নয় বরং রাবীর দুর্বলতার কারণে হাদীছকে দ্বয়ীফ বলা হয় দ্বয়ীফ হাদীসের দুর্বলতার কম বা বেশী হতে পারে কম দুর্বলতা হাসানের নিকটবর্ত্তী আর বেশি হতে হতে মওজুতে পরিণত হতে পারে ধরনের হাদীছ আমলে উৎসাহিত করার জন্য বর্ণনা করা যেতে পররে বা করা উচিৎ তবে আইন প্রণয়নে গ্রহনযোগ্য নয়

প্রসঙ্গে হযরত ইমাম ইবনে হুমাম রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,

দ্বয়ীফ হাদীছ যা মওজু নয় তা ফজিলতের আমল সমূহে গ্রহণযোগ্য

দলীল- (ফতহুল ক্বাদীর)

বিখ্যাত মুহাদ্দিস ফক্বিহ হযরত মোল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,

সকলেই একমত যে দ্বয়ীফ হাদীছ ফজিলত হাসিল করার জন্য আমল করা জায়েজ আছে

দলীল- (আল মওজুআতুল কবীর, ১০৮ পৃষ্ঠা)

উপরোক্ত বর্ণনার দ্বারা প্রমাণিত হল যে, দ্বয়ীফ হাদীছ ফজিলত হাসিল করার জন্য আমল করা জায়েজ আছে তবে দ্বয়ীফ হাদীছ দ্বারা সাব্যস্ত সকল আমল মুস্তাহাব

যেমনঃ আল্লামা ইব্রাহিম হালবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার গুলিয়াতুল মুস্তামালী ফি শরহে মুনিয়াতুল মুছাল্লি কিতাবে উল্লেখ করেছেন,

গোসলের পরে রূমাল (কাপড়) দিয়ে শরীর মোছা মুস্তাহাব হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হতে বর্ণিত আছেআল্লাহ পাকের হাবীব হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটুকরা কাপড় (রূমাল) ছিল যা দিয়ে তিনি অযুর পরে শরীর মুবারক মুছতেন

দলীল- (তিরমিযি শরীফ)

এটা দ্বয়ীফ হাদীছ কিন্তু ফজিলত হাসিল করার জন্য আমল করা যাবে

হযরত মোল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার আল মওজুআতুল কবীরের ১০৮ পৃষ্ঠায় বলেন,

সকলে একমত যে দ্বয়ীফ হাদীছ ফজিলত হাসিল করার জন্য আমল করা জায়েজ আছে এজন্য আমাদের আইম্মায়ি কিরামগণ বলেছেন, অযুর মধ্যে গর্দান মসেহ্ করা মুস্তাহাব তার মানে অযুর মধ্যে গর্দান মসেহ্ করা - এটি দ্বয়ীফ হাদীছ

সুতরাং যারা শবে বরাতের হাদীস সংক্রান্ত কিছু দলীলকে দ্বয়ীফ হাদীছ বলে শবে বরাত পালন করা বিদায়াত বলে তাদের এধরনের বক্তব্য সম্পূর্ণ ভূল

শবে বরাত অস্বীকার করে বেঈমান হবেন না?

শবে বরাত বা লাইলাতুন নিফসি মিন শাবান এর ফযীলত যারা অস্বীকার করবে তারা বেঈমান এবং জাহান্নামী

বেঈমান হওয়ার দলীলঃ শবে বরাত এর ফযীলত স্পষ্ট হাদীস দ্বারা প্রমাণিতকেউ যদি শবে বরাতের ফযীলতকে অস্বীকার করে তাহলে সে শবে বরাতের ফযীলত সম্পর্কে বর্ণিত স্পষ্ট সহীহ হাদীসকে অস্বীকার করল ! এখন সে সহীহ হাদীসকে অস্বীকার করার কারনে সে ঈমানদার থাকল না বেঈমান হলো ?

জাহান্নামী হওয়ার দলীলঃ ইজমা দ্বারা শবে বরাত প্রমাণিতএরাতের ফযীলত, আমলের উপর সকল আলিমের ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কারণে শবে বরাতের ফযীলত, আমল সকল ওলামা- কেরামের ইজমা দ্বারা প্রতিষ্ঠিত সর্বত্র তা অনুসৃতএমনকি যারা আজ শবে বরাতের বিরোধিতা করছে তাদের ইমামরাও এবিষয়ে ঐক্যমত পোষণ করেছেন

মুসলমানদের সর্বোৎকৃষ্ট শ্রেণীর আলিমদের ইজমা গ্রহণযোগ্যতা সম্পর্কে কোরআন মজিদে এরশাদ হয়েছেঃ

وَمَنْ یُّشَاقِقِ الرَّسُوْلَ مِنْ بَعْدِ مَا تَبَیَّنَ لَہُ الْہُدٰی وَیَتَّبِعْ غَیْرَ سَبِیْلِ الْمُؤْمِنِیْنَ نُوَلِّہٖ مَا تَوَلّٰی وَنُصْلِہٖ جَہَنَّمَ وَسَآ ءَ تْ مَصِیْرًا [سورۃ نساء آیت ۱۱۵]

অর্থাৎ রাসূলের কাছে হিদায়ত প্রকাশিত হওয়ার পর যে কেউ তাঁর বিরুদ্ধাচারণ করে এবং মুসলমানদের অনুসৃত পথের বিরুদ্ধে যে কেউ চলে, আমি তাকে ওই পথেই চালাবো, যে পথ সে অবলম্বন করেছে এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবোআর জাহান্নাম হচ্ছে নিকৃষ্টতম স্থান’’            

[সূরা নিসা: আয়াত-১১৫।] 

উক্ত আয়াত অনুসারে, রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু তাআলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর বিরোধিতা এবং মুসলমানদের অনুসৃত ঐকমত্যের বিরোধিতা উভয়টির পরিণামই জাহান্নাম

শবে বরাত মেনে ইবাদত বন্দেগী করা সকল মুসলমানের অনুসৃত পথসুতরাং এর বিরোধিতার পরিণামও ভয়াবহ

সকলের অনুসৃত পথকেইজমা- উম্মত বলা হয়

নবী করীম সাল্লাল্লাহু তাআলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন-

لاَ تَجْتَمِعُ اُمَّتِیْ عَلَی الضَّلاَلَۃِ

অর্থাৎ ‘‘আমার সকল উম্মত গোমরাহীর কাজে ঐক্যবদ্ধ হতে পারে না’’

সুতরাং শবে বরাত উপলক্ষে ইবাদত বন্দেগী করা যে মন্দ কিছু নয়, তা সমগ্র উম্মত দ্বারা অনুসৃত গৃহীত হওয়াই এর প্রকৃষ্ট প্রমাণএবং এর বিরোধিতা যারা করবে তারা জাহান্নামী

অনেকের মনে একটি সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে যে, কেউ বলে শবে বরাতে কোনো নিদিষ্ট আমল নেই, আবার কেউ বলে শবে বরাতে আমল আছেযে যার মত ইচ্ছা অনুযায়ী দলিল দিতাছে, এখন আমরা সাধারন লোক কোনটি সঠিক মানবো ??

দেখুন, শবে বরাত এর বিপক্ষ যারা বলতেছে তাদের এমন কোন দলীল নাই কোরআন, হাদীস, ইজমা, কিয়াস থেকে যে শবে বরাত নাজায়েজ, হারাম বা রাত্রে আমল করা যাবে না বিদয়াত ইত্যাদি প্রকৃত পক্ষে এরা শবে বরাতের বিপক্ষে নয়, কোরআন হাদীসের বিপক্ষে কথা বলছেসুতরাং এসব তাদের মনগড়া কথাবার্তা

কোন বিষয়কে নাজায়িয প্রমান করতে হারামের দলীল পেশ করতে হয়হারামের দলীল না থাকলে সেটা এমনিতেই মুবাহ এবং জায়িয হয়।।

হালাল হচ্ছে, যা আল্লাহ তায়ালা স্বীয় কিতাবে হালাল করেছেন আর হারাম হচ্ছে, যা আল্লাহ তায়ালা স্বীয় কিতাবে হারাম করেছেনএবং যেটা সম্পর্কে নীরব রয়েছেন, সেটা মাফ। {মিশকাত শরীফ}

হাদীস শরীফ থেকে বুঝা যায়, যেটা হালাল সেটা কোরআন শরীফে বলা আছে, যেটা হারাম সেটাও বলা আছেআর যে বিষয়ে কিছু বলা হয় নাই, সেটা মুবাহ হবে

সেটা ফিকাহ এর কিতাবে আছে-

জমহুর হানাফী এবং শাফেয়ী উনাদের মতামতই রয়েছে যে, প্রত্যেক কিছু মূলত মুবাহ হয়ে থাকে।"

{ফতোয়ায়ে শামী-১য় খন্ড-কিতাবুত্তা হারাত।}

অর্থাৎ, প্রত্যেক বিষয়ের মূলত মুবাহ, স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা ছাড়া কখনোই সেটা হারাম/ নাজায়িয হয় না

যাদের মনে সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে আপনাদের কাছে আমার একটি প্রশ্ন থাকল যে, ভাল কোন কিছু করতে হলে অর্থাৎ নফল ইবাদত-বন্দেগী করতে হলে হুবহু কোরআন, হাদীসের দলীল খুঁজতে হবে ? নফল ইবাদত-বন্দেগী করা কি ইসলামে নিষেধ ?

আর শবে বরাতের ফযিলত সম্পর্কে অসংখ্য হাদীস বর্ণিত হয়েছে যা আমি আমার ওয়ালে আপনাদের সামনে তুলে ধরেছি, তাই একটু বিবেক দিয়ে চিন্তা করুন কারা সত্য আর কারা মিথ্যা

শা'বানের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত তথা শবে বরাতের ফজিলত সম্পর্কে মসজিদে নববীতে খুতবা !  (সুবহানাল্লাহ !)

عن أبي موسى الأشعري رضي الله عنه، عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: إن الله ليطلع ليلة النصف من شعبان، فيغفر لجميع خلقه، إلا لمشرك أو مشاحن (ابن ماجة، بَاب مَا جَاءَ فِي لَيْلَةِ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ: ١٣٩٠)

অর্থ: আবূ মূসা আল-আশআরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিতরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আল্লাহ পাক মধ্য শা'বানের রাতে (শবে বরাতের রাতে) রহমতের দৃষ্টিতে তাকান এবং মুশরিক হিংসুক ব্যতীত তাঁর সৃষ্টির সকলকে ক্ষমা করেন। (ইবনে মাজাহ সহীহ ইবনে হিব্বান)

শাইখ নাসিরুদ্দিন আলবানীও এই হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন ! শবে বরাত বিরোধী আহলে বাতিলেরা এখন কি বলবেন ? আপনাদের সবচেয়ে সহীহ (?) শাইখ সহ গুরুজনদের বিরুদ্ধে বিদআতের ফতোয়া দিতে পারবেন কি?

ইনশাআল্লাহ আমরা (আহলুস্ সুন্নাহ) ঈমান আমলের ক্ষেত্রে সব সময়ই হক্বের পথে ছিলাম, আছি এবং থাকব ইনশাআল্লাহ

আল্লাহ আমাদেরকে হক বুঝার তাওফীক দিন এবং সবাইকে মোবারকময় রাত্রে ইবাদত বন্দেগি করার তাওফিক দান করুন আমীন ।।

 

পোস্টঃ আহসান হাবীব শাহ 

Post a Comment

Please Select Embedded Mode To Show The Comment System.*

Previous Post Next Post

Featured post