মাযহাবের ভিন্নতা কি ধর্মের বিভক্তি?

💬 : 0 comment

তামীম রায়হান

হজ থেকে ফেরার পর কোনো এক হাজি সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হলো, মক্কায় কেমন দেখলেন? তিনি একটু ভাব নিয়ে বললেন, মক্কায় গিয়ে দেখি, খালি আযানটা দেয় বাংলায়, আর বাকি সবই কেমন যেন মনে হলো।

বেচারা হাজি সাহেব যে আযান সবসময় নিজের গ্রামে শোনেন, সে আযানই মক্কায় শুনতে পেয়ে ভাবলেন, এটা তো বাংলাদেশের বাংলা আযান। বাকি নামায অন্যান্য ইবাদত তো অন্যরকম- তাই এ নিয়ে তিনি সন্দিহান।

সাধারণত বাংলাদেশের কোনো মসজিদে যদি কেউ হানাফি ছাড়া অন্য মাযহাবের নিয়মে নামায পড়ে তবে সবাই হা করে তাকিয়ে থাকে, কেউ কেউ ভাবে, আহা বেচারা! কী কষ্ট করে ভুল নামায পড়ছে!!

কিন্তু ইসলামের চারটি মাযহাব রয়েছে:

১.    হানাফী- ইমাম আবূ হানীফা (রহ.)

২.    মালেকী- ইমাম মালেক বিন আনাস (রহ.)

৩.    শাফেয়ী- ইমাম শাফেয়ী (রহ.)

৪.    হাম্বলী- ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রহ.)

আমরা বাংলাদেশিরা প্রায় সবাই হানাফী মাযহাবের মতে আমল করি। কিন্তু তাই বলে কি বাকি তিনটি মাযহাব অন্য ধর্মের মতো ভিন্নরকম? তাদের ইবাদতও কি আমাদের মত শুদ্ধ ও কবুল হয়? তাদের সাথে কি বিয়ে শাদী ও অন্যান্য লেনদেন বৈধ?

রাসূল (সা.) বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে নামায আদায় করেছেন। সাহাবায়ে কেরামদের মধ্যে যখন যে যেভাবে দেখেছেন, তারা সেভাবেই নামায পড়তেন। অন্যান্য ইবাদতের বেলায়ও তাই। যে সাহাবি যে পদ্ধতি রাসূলের কাছ থেকে শিখেছেন ও দেখেছেন, তিনি বাকি জীবন ওভাবেই আমল করেছেন। এ পার্থক্য শুধু অর্থ অনুধাবনে ও আদায়ের পদ্ধতিতে, অন্য কিছু নয়।

তার মানে কিন্তু এই নয় যে, কেউ এক রাকাতে দুই রুকু কিংবা তিন সিজদা করেছেন। রমযানের রোযা কেউ কম বা বেশি রেখেছেন, যাকাতের হিসেবে চল্লিশ ভাগের একভাগের চেয়ে কেউ কম বা বেশি করেছেন- এমন কিছুই নেই। যেটুকু পার্থক্য রয়েছে- তা কেবলই আদায় করার পদ্ধতি নিয়ে। কোনো সন্দেহ নেই যে এর সবগুলোই রাসূল (সা.) আদায় করেছেন, তবে বর্ণনাগত দূরত্ব বা নৈকট্যের তারতম্যে চার ইমাম সেখান থেকে কোনো একটিকে বাছাই করেছেন। কখনো কখনো বহু অর্থবোধক শব্দের আসল অর্থ নির্ধারণের তারতম্যে ভিন্নতা সৃষ্টি হয়েছে। কেউ আভিধানিক অর্থ নিয়েছেন কেউ পরিভাষার অর্থ। তাই কোনো এক মাযহাব সঠিক আর বাকিগুলো ভুল- এমন ধারণা সম্পূর্ণ অবাস্তব।

ইমামরাও তাদের মাযহাবের কোনো বিষয়ে সন্দেহ থাকলে কুরআন, হাদিস ও সাহাবায়ে কেরামদের বর্ণনায় যেটি সর্বাধিক সহি সেটি গ্রহণ করার কথা বলেছেন।

তাই বলে কি আমরা সুবিধা মত সব মাযহাবের ওপর আমল করা শুরু করব? না, তা নয়। কারণ এতে দ্বীন ও ইবাদত আমাদের সুবিধামত খেলার উপকরণে পরিণত হবে। বরং যে যে মাযহাবের পদ্ধতি শিখেছে, তার সেভাবেই পুরো দ্বীন মানা উচিত।

এ কথাও মনে রাখতে হবে, হানাফী মাযহাবের অনুসারী মানে কিন্তু ইমাম আবু হানিফার অনুসরণ নয়, আমরা ইমাম আবু হানিফার মাধ্যমে রাসূল (সা.) কেই অনুসরণ করছি। ইমাম এখানে নিছক মাধ্যম ছাড়া আর কিছু নন।

কুরআন ও সুন্নাহর বিশাল সাগর পাড়ি দেওয়া আমাদের একার পক্ষে সম্ভব নয়, এর পথ ও পদ্ধতি রপ্ত করাও দুঃসাধ্য বিষয়। তাই সাধারণ মুসলমানদের জন্য চার ইমামের চার মাযহাব হল নৌকার মতো। এ নৌকাগুলোর মাধ্যমে মুসলমানরা তাদের দৈনন্দিন জীবনে দ্বীনের সাগর পাড়ি দিয়ে আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টির বন্দরে ভিড়ে।

এখন যদি এ নৌকাগুলোর যাত্রী সাগর পাড়ি দেওয়া বাদ দিয়ে পারস্পরিক ধাক্কাধাক্কি ও ঠুকোঠেুকিতে লিপ্ত হয় তবে ছিটকে পড়ে হাবুডুবু খাওয়া ছাড়া উপায় নেই, তীরে আর পৌঁছা যাবে না। মাযহাব নিয়ে অশ্রদ্ধা ও পারস্পরিক বিতর্ক ও সংঘাতের ব্যাপারটি ঠিক এমনই।

তবে কেউ যদি কুরআন ও হাদীসের এবং ইসলামী শরীয়তের মূল ভিত্তিগুলো সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞান ও পা-িত্যের অধিকারী হয় এবং নিজের ওপর সম্পূর্ণ আস্থা থাকে- তখনই কেবল মাযহাব ছেড়ে দিয়ে নিজের ইজতিহাদ মতো আমল করা যাবে।

আমাদের ভুলে গেলে চলবেনা যে আসলে এ চার মাযহাবের মাধ্যমে আল্লাহ পাকের বিধান ও রাসূলের সুন্নাতের সব পদ্ধতি ও রকমের অনুসরণ হচ্ছে বিশ্বজুড়ে। এটা কুদরতি এক নিদর্শন। বিশ্বের সব মুসলমান এক পদ্ধতিতে নামায পড়লে রাসূল (সা.) এর অন্য পদ্ধতিগুলো হারিয়ে যেত। পবিত্র কুরআনের সাত ক্বেরাত পদ্ধতির মতো এ চার মাযহাবও এ উম্মতের জন্য রহমত। কুরআন ও সুন্নাহ থেকেই এগুলোর উৎপত্তি।

রাসূল (সা.) একবার সফরে রওয়ানা হওয়ার আগে বললেন, সবাই যেন বনু কুরাইযার অঞ্চলে গিয়ে আসর নামায পড়ে। কোনো কোনো সাহাবি ভাবলেন, রাসূলের (সা.) এ কথা বলার কারণ হল- যেন পথে দেরি না হয়। তাই তারা দেরি না হওয়ার মতো করে পথেই আসর আদায় করে ফেললেন। আর একদল ভাবলেন, রাসূল (সা.) স্পষ্ট করে যা বলেছেন, সেটাই মানা ভাল। তারা সেখানে পৌঁছে আসর আদায় করলেন। রাসূল (সা.) এর আগে ও পরে আদায়ের কথা শুনে দু’টোকেই ঠিক বললেন এবং পথে আদায়কারীদের নামায পুনরায় আদায় করতে বলেননি।

সাহাবারা এ ঘটনায় যেমন রাসূলের (সা.) উদ্দেশ্য অনুধাবন নিয়ে দু’ভাগে ভাগ হয়েছিলেন, চার মাযহাবে ভিন্নতা ঠিক এ রকমই। কিন্তু মৌলিক ও স্পষ্ট বিষয়সমূহে সবাই সম্পূর্ণ একমত এবং যেটুকু ভিন্নতা রয়েছে- তা নিয়ে তারা কোনোদিন বিবাদ কিংবা গালমন্দ তো দূরের কথা- সামান্য তাচ্ছিল্যও দেখাননি। কারণ কোনো এক মাযহাবকে নিয়ে ঠাট্টা করা মানে স্বয়ং রাসূলের একটি পদ্ধতি বা বর্ণনাকে তুচ্ছ করা।

আর তাই নিজেদের ইবাদত আদায়ের সময় নিজের মাযহাব সম্পর্কে জানা এবং সঠিকভাবে তা আদায় করাই সচেতন মুসলমানের কাজ। পদ্ধতির এ ভিন্নতাকে যদি কেউ ধর্মের বিভক্তির মতো মনে করে এবং এ নিয়ে তালগোল পাকায়- তবে ভ্রান্তির উত্তাল সাগরে হাবুডুবু খাওয়া ছাড়া তার কোনো সমাধান নেই।

আসুন, ছোটবেলায় নানা দাদারা কে কী বলেছেন, মক্তবের হুজুর কী শিখিয়েছিলেন- সেসবের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে যার যার মাযহাব সম্পর্কে আলেমদের কাছ থেকে সঠিক জ্ঞান অর্জন করি এবং আদায় করি। যে কোনো বিশ্বস্ত ও অভিজ্ঞ আলেমের কাছ থেকে জেনে ইসলাম মানার নির্দেশ স্বয়ং আল্লাহ পাক দিয়ে রেখেছেন পবিত্র কুরআনে- ‘আর তোমরা যদি না জানো তবে অভিজ্ঞ কাউকে জিজ্ঞেস করে নাও-’(নাহল-৪৩)।

লেখক -শিক্ষার্থী- কাতার ইউনিভার্সিটি, দোহা, কাতার

সূত্র http://www.banglanews24.com/detailsnews.php?nssl=2ec8a05725aebca751493eb7f49e9e7f&nttl=20120413124708103745

একটি বিষয় সকল মুসলমানের জানা থাকা আবশ্যক। কারো দ্বিনী কথা সঠিক না বেঠিক, শুদ্ধ না অসুদ্ধ তা বোঝার একটি সহজ উপায় আছে। তা হলো যারাই দ্বীন প্রচার করছে বা বিভিন্ন মাসআলা বর্ণনা করছেন তাদের ভাষা, আচার আচরণ এবং তাদের কথাবার্তা পূর্বসূরী ইমাম, মুহাদ্দিস এবং মুজতাহিদদের সাথে মিলছে কি না। নাকি তারা পূর্বসূরীদের বাদ দিয়ে তাদের তোয়াক্কা না করে নিজেদের মতাদর্শ প্রচারে লিপ্ত। শুধু এ বিষয়টি দেখলেই আপনার কাছে বাতিল আর হকের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যাবে। কারণ ইসলামের শুরু থেকেই ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীরা ছিল অত্যন্ত সচেতন। ইসলামের মূল ধারাকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য তারা নতুন নতুন দল গঠন করে। এর মধ্যে ইসলামের তৃতীয় খলীফার যুগে সৃষ্টি হয় শিয়া, এরপর খারেজী। এর পর আরো অনেক। তাদের সবসময় চেষ্টা ছিল ইসলামের এমন এমন বিষয় সংযুক্ত করা যা ইসলামে নেই। রাসূল (সা.) বলেননি। সাহাবায়ে কেরাম বলেননি এবং আমল করেননি। এই জন্য সাহাবায়ে কেরাম সবসময় এসব দলকে রাষ্ট্রের কাছে ভিড়তে দেননি। তাদের ষড়যন্ত্র প্রতিহত করেছেন। তাবেঈনের যুগে এসে এসব বাতিলগুলো তাদের মিশন আরো বাড়িয়ে দেন। তাবেঈন তাবেঈনদের যুগে যখন রাফেজী, শিয়া, খারেজী ইত্যাদীর তৎপরতা বৃদ্ধি পাচ্ছিল তখন তারা চিন্তা করলেন ইসলামের মূল বিধানগুলো সহীহ শুদ্ধভাবে সংকলন করা না হলে পরবর্তীতে উম্মাতে মুহাম্মদিয়া সঠিক বিষয়গুলো থেকে বঞ্চিত হবে। তখন থেকে ফেকাহ ও হাদীস সংকলনের কাজ আরম্ভ হয়। ফেকাহ হলো কুরআন হাদীস থেকে উৎকালিত নির্যস। কুরআন ও হাদীস থেকে ইসলামের বিধানাবলীকে সংকলন করে মানুষের সহজবোদ্ধ করে সুবিন্যস্ত আকারে প্রকাশ করাই হলো ফিকহ। কুরআন ও হাদীস থেকে মাসআলা সংকলন করতে গিয়ে যেসকল ইমাম যত বেশি শুদ্ধ ও বেশি মাসআলা সংকলন করেছেন তারাই উম্মাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হয়েছেন। এর মধ্যে ইমাম আবু হানীফা (রহ.) এক নাম্বারে। কারণ সংখ্যার দিক থেকে তিনিই বেশি মাসআলা সংকলন করেছেন। আবার শুদ্ধের ক্ষেত্রেও তিনি অগ্রগণ্য। সেরূপ দুই নাম্বারে স্থান পেয়েছেন ইমাম শাফেয়ী (রহ.) এর পর ইমাম মালেক ও ইমাম আহমদ (রহ.)। তাঁরা ছাড়াও আরো অনেকে মাসআলা সংকলন করেছেন। কিন্তু অন্য ইমামগণ এই চার ইমামের মত এত ব্যাপক আকারে মাসআলা সংকলনে সামর্থ হননি। আবার অনেকের মাসআলা সংকলন বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছে।এই কারণে এই চার ইমামকেই পুরো দুনিয়ার মুসলমানগণ কবুল করেছেন। আবার এই চার ইমাম ছিলেন সমকালিন বাতিলপন্থীদের জন্য কড়কহস্ত। কোনো বাতিল দলকে তাঁর প্রশ্রয় দেননি।সে কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে বাতিলদের ষড়যন্ত্রও বেশি হয়েছে। বড় আশ্চার্যর বিষয় হলো দুনিয়ায় এমন কোনো ধর্মীয় বিষয় নেই যেগুলোর ব্যাখ্যা এই চার ইমামের কেউ দিয়ে যাননি।এই কারণে চার ইমামের সমাধানের উপর সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হয়েছে। যেহেতু সবচেয়ে বেশি মাসআলার ব্যাখ্যা ইমাম আবু হানীফা (রহ.) দিয়েছেন সে কারণে একবাক্যে সকলে ইমাম আবু হানীফা (রহ.)কে ইমামে আজম তথা সবচেয়ে বড় ইমাম বলে আখ্যায়িত করেছেন। যেহেতু এই চার ইমাম এমন কোনো মাসআলার সমাধান রেখে যাননি যা পরে আর কাউকে সমাধান করতে হবে সে কারণে এক দিকে চার ইমামের গবেষণার উপর পুরো উম্মত শরীয়তকে সীমাবদ্ধ করেছেন সেহেতু এই কথাও বলা হয়েছে এই চার ইমামের যে কারো মাসআলার ব্যাখ্যামতে চললে ইনশাআল্লাহ সে মুক্তি প্রাপ্ত হবে। এই কারণে আমাদের দেখতে হবে ইসলামের নামে যে কেউ কাজ করছে তাদের শরীয়তের ব্যাখ্যা এই্ চার ইমামের সাথে মিলছে কি না। যদি না মিলে বলতে হবে এটি খারেজী রাফেজী এবং ইহুদী খৃষ্টানদের সৃষ্ট আরেকটি দল। এদের কথা যদিও বাহ্য দৃষ্টিতে কুরআন হাদীসের সাথে মিলছে বলে মনে হয় দেখা যাবে কোনো বিষয়ে তারা এমন কথাও বলছেন যা সম্পূর্ণ কুরআন হাদীস বিরোধী। অথচা দেখা যাবে এমন  কোনো আমল এরা করছে যা কুরআন হাদীসের বিরোধী। তখন মনে করতে শুধু কুরআন হাদীস বিরোধী এই কয়টি আমল মুসলমানদের মধ্যে প্রবেশ করানোর জন্যই মূলত দলটিকে ইহুদী খৃষ্টান, শীয়া খারেজীরা তৈরী করেছে।

যেমন ধরুন আহলে হাদীস নামের একটি দল বের হয়েছে। যারা সবসময় চার মাযহাবের বিরোধিতা করে। কিন্তু এরাকি এমন কোনো নতুন মাসআলার ব্যাখ্যা দিতে পেরেছে যা চার ইমামের কোনো ইমাম বলে যাননি। ইনশআল্লাহ পারবে না। যদি তাই সত্য হয় তাহলে এরূপ আরেকটি দল করার কি প্রয়োজন ছিল? বলা যাবে মুসলমানদের সেরূপ দলের প্রয়োজন না হলেও কাফির-বাতিলদের প্রয়োজন আছে। সে কারণেই এদের সৃষ্টি।

এরা সবসময় মুসলমানদেরকে পূর্বপুরুষদের পন্থা থেকে বের করতে চায়। বরং স্পষ্ট বলে পূর্বপুরুষদের অনুসরণ শিরিক। আচ্ছা বলেনতো পুর্বপুরুষদের বাদ দিলে ইসলামের আর কি বাকি থাকে। কারণ আমরা ইসলাম পেয়েছি তাদের মাধ্যমেই। মাযহাব যারা মানে তারাতো চার ইমামের অনুসরণ করে না। বরং তাদের দেওয়া ব্যাখ্যা মতে রাসূলূ (সা.) এর অনুসরণ করে থাকে। তাদের ব্যাখ্যা মানা যদি তাদেরই অনুসরণ হতো তবে আহলে হাদীসরা যে ব্যাখ্যা দেন তা মানলে কেন শিরিক হবে না? তারা বলবে তারা সহীহ হাদীস  থেকে ব্যাখ্যা দিয়ে থাকেন। তখন বলা হবে এতবছর পরে এসে আহলে হাদীসরাই একমাত্র সহীহ হাদীস থেকে ব্যাখ্যা দিচ্ছেন আর চার ইমামগণ কি রামায়ন আর মহাভারতের ব্যাখ্যা দিয়েছেন নাকি?তারাও তো কুরআন হাদীসের ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তবে পার্থক্য হলো চার ইমামের সাথে সাহাবা তাবেঈন তবে তাবেঈনের যুগ কাছা কাছি ছিল। আর আহলে হাদীসদের উত্থান ১৪০০ পছর পরে হচ্ছে। এখন প্রশ্ন হলো যারা সাহাবী দেখে নিজে তাবেয়ী হয়েছেন যারা তাবেয়ীকে তবে তাবেয়ী হয়েছেন তাদের ব্যাখ্যা শুদ্ধ হবে নাকি যারা ১৪০০ বছর পরে বুশকে দেখে বুশের সাহাবী হয়েছেন, উবামাকে দেখে উবামার সাহাবী হয়েছেন তাদের ব্যাখ্যা শুদ্ধ হবে?

একারণেই আহলে সুন্নাত জামাআতের রীতি হলো হক বাতিল চেনার এক নাম্বার পন্থা হলো ওই দলের সাথে পূর্বপুরুষদের সাথে সম্পর্ক কেমন তা দেখা।যদি পূর্বপুরুষদের রীতি থেকে এরা পশ্চাদাপসারিত তখন বুঝতে হবে এরা বাতিল শয়তানের দল। এদের মূলে রয়েছে শিয়া, কাদিয়ানী, বৃটিশ ইসরাঈল এবং আমেরিকা। এদের কোনো কথা শুদ্ধ হলেও মান্য করা যাবে না। কারণ এদের একটি শুদ্ধ কথা পেছনে আরো ১০০টি চক্রান্তমূলক অশুদ্ধ বিষয় লুকায়িত আছে।

যেমন ধরুন এদের প্রথম কথাটিই ভুল। কারো তাকলীদ বা অনুসরণ করা ভুল। শুধু হাদীস পড়েই মাসআলা জানতে হবে। আচ্ছা দেখুন তো হাদীসগুলো কি রাসূলুল্লাহ (সা.) তাদেরকে এসে বলে যান। না কি সরাসরি তারা নবী করীম (সা.) থেকে হাদীসগুলো শুনেন। হতে পারে না। বরং তারা হাদীস বুখারী, মুসলিম, আবুদাউদ, নাসায়ী, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ সহ অন্যান্য হাদীস গ্রন্থ থেকে পাচ্ছেন। আচ্ছা এসব কিতাব কি সরাসরি রাসূলুল্লাহ (সা.) লেখেছেন? না। তাহলে এদেরকে মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করেই হাদীস গুলো পাওয়া যাচ্ছে। এটি কি অন্ধ অনুসরণ নয়? কোন হাদীস সহীহ কোন হাদীস জয়ীফ এসব কথা হাদীসে নেই। এর সবই মুহাদ্দিসগণের মতামত। তাদের মতামতের ভিত্তিতে যদি আমি হাদীসকে সহীহ জয়ীফ বলছি এটি তাদের মতের অনুসরণ নয়, এবং তাকলীদে শখসী নয়? তাহলে এগুলোও তো শিরিক।

তাতে বোঝা যায় আজকে যদিও তারা অন্ধঅনুসরণ করা যাবে না বলে ফিকাহকে বাদ দিতে চাচ্ছে পরে আরেকটি হুবহু বাতিলদের সৃষ্টি এমনও বের হবে যারা বলবে হাদীসও তো অন্ধ অনুসরণ সুতরাং হাদীসও বাদ। এমনিভাবে পুরো ইসলামকেই বাদ দিতে চায় তারা। সম্প্রতি মুনকেরীনে হাদীসের দলও একটা বের হয়েছে।

বাতিল পন্থীদের ষড়যন্ত্র দেখুন। একদিকে আহলে হাদীস নাম দিয়ে ফিকাহ বাদ করার একটি দল আবিষ্কার করল অন্য দিকে আহলে কুরআন নামে হাদীস বাদ করার একটি দল সৃষ্টি করলো। কদিন পরে বের হবে আহলে ইসলাম। তারা বলবে অন্ধ অনুসরণ কোনো মতেই জায়েয নেই, এটি স্পষ্ট শিরিক। সুতরাং ফিকাহও বাদ, হাদীসও বাদ এমনকি কুরআনও তো যুগে যুগে হেণ্ড বাই হেণ্ড এসেছে সুতরাং তাও মাধ্যমের উপর ভর করে এপর্যন্ত এসেছে। তাই এটিও বাদ নাউজু বিল্লাহ।এ অবস্থা সৃষ্টির প্রাথমিক অপপ্রয়াস হলো আগে যে সকল পূর্বপুরুষদের মাধ্যমে কুরআন, হাদীছ, ফিকাহ আমরা পেয়েছে তাদের বদনাম করতে হবে, তাদের ভক্তিশ্রদ্ধা মুসলমানদের থেকে বিদায় দিতে হবে, তাদেরকে সকলের সামনে সন্ধিহান করে তুলতে হবে। এই প্রয়াসে যদি কামিয়াব হয় তখন পুরো ইসলাম সম্পর্কেই মুসলমানগণ সন্ধিহান হয়ে পড়বে। যা হবে সকলের ঈমান ধ্বংসের মূল কারণ।

তাই আমরা দেখি, প্রথমে সাহাবী দুশমন বের হয়েছে। যারা সাহাবাগণের দোষ ত্রুটি বর্ণনায় পঞ্চমুখ। এরপর দেখা গেল ফেকার ইমামদের দুশমন। যারা তাদের দোষত্রুটি বর্ণনায় পঞ্চমুখ এবং মুসলমানদেরকে তাদের থেকে ফিরানোর যাবতীয় আয়োজন। আরেকটি দল বের হয়েছে মুহাদ্দিস গণের দুশমন। যারা মুহাদ্দিস গণের সমালোচনায় পঞ্চমুখ এবং হাদীস থেকে মুসলমানদের ফেরানো রকমারী আয়োজন। এভাবে করেই মুসলমানদের ঈমান হরণের নিল নকশা বিধর্মীদের। তাই বাস্তবায়িত হচ্ছে মুসলমানদের মাঝে এসব নতুন নতুন দলগুলোর মাধ্যমে। সুতরাং যে কোনো মুসলমানকে আমাদের দেওয়া থিউরী মনে রেখে চলা উচিত। সাহাবা, তাবেঈন, তবে তাবেঈন, ইমাম, মুজতাহিদ, মুহাদ্দিস, আওলিয়ায়ে কেরাম এদের মাধ্যমে দ্বীনে ইসলাম আমাদের যুগ পর্যন্ত পৌঁছেছে। এদের কারো বিরুদ্ধে যদি কোনো দল বলে থাকে, বিরুদ্ধে না বললেও এদের থেকে বিচ্ছিন্ন করার পায়তারা যারা করবে ধরে নিতে এরা বাতিল। এদেরকে সমাজে স্থান দেওয়া মানে নিজের দ্বীনকে নষ্ট করার সুযোগ করে দেওয়া।

তাই আমাদের সবসময় সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। এরূপ দল যত সুন্দর রূপেই আসুক, যত বিন্যস্ত আকারেই আসুক এদের খপ্পর থেকে জাতিকে রক্ষা করার চেষ্টা করতে হবে সম্মিলিত ভাবে, ব্যক্তিগতভাবে। সামাজিকভাবে, রাষ্ট্রীয়ভাবে, পারিবারিকভাবে। এককভাবে, সামষ্টিকভাবে।

আল্লাহ আমাদের তাওফীক দান করুন। আমীন

No comments: